
কবির নাম, বয়স, লিঙ্গ, ঠিকানা ইত্যাদি যা কিছু কবিতার জন্য জরুরি নয়, তা আমরা মুছে দিয়েছি। আর এভাবেই ১০টি কবিতা পাঠানো হয়েছে অন্য এক কবির কাছে- আলোচনার জন্য। শুধু ১০টি কবিতা, আগে পরে নাথিং। আমাদের সাথে রুমালচুরির এই খেলা খেললেন ১৯ জন কবি।
এখানেও কবির নাম ছাড়া ১০টি কবিতা রাখা হল, সঙ্গে থাকলো আলোচনা। কবির নাম জানার রাস্তা কবিতার নীচ দিয়ে গেছে। তবে আমরা বলবো রুমালচুরির এই খেলায় আপনিও থাকুন। কবির নামটা না হয় একটু পরেই জানলেন।
১০টি কবিতা
উল্কি
কার হাত ধরে কে এলো, উঠোন জানে না
সে শুধু ছোঁয়ায় পিছল
যখন
লিলিফুলে বর্ষা
লেখা হচ্ছে
স্কি করতে করতে
কাগজের নৌকো
মেঘ আর আমাকে টা-টা করছে খুব…
দুয়ার হাত থেকে বেরিয়ে গেলেই অথৈ
বৃষ্টি হোক আর নাই
হোক এই-ই
রসকাল…
একটুও না ভিজে
দীর্ঘ এক
ছায়ার হাতে মিশে যাচ্ছিলে
দাঁড়িয়ে থেকেও পায়ের পাতা ভিজছে না
ফোয়ারায়…
যে হাতটা আমার
দিকে বাড়ানো
তার কাউন্ট-ডাউনে ধরা ছিল নাইন-ও-ক্লক
উৎস অজানা
হাত থেকে
হাতে তবু উল্কি আঁকা হচ্ছিল… (অক্টোবর ২০১১)
চাবি
লাশের ঘুনসিতে বাঁধা চাবি ধূপকাঠি পোড়ার গন্ধে ব্যাকুল
চাবির খাঁজে
পথের সন্ধান
একটু একটু ধোঁয়ায়…
স্বপ্নের কোয়ার্টার আর
ডোমঘর পাস-ওয়ার্ডের বেলুন ওড়াচ্ছে
রজনীগন্ধার
গালে কীটের গন্ধমাদন
বিছানা
বালিশে লাশের ই-মেল আই-ডি
তাঁবুর খুঁটি যেন…
ঘুমের আগে আগে ঘুমের ট্যাবলেট হেঁটে যায় লাশ পর্যন্ত
জিরো বাই জিরো
বাই ওয়ান বাই ওয়ান
জিপসি
সরণি…
ঠিকানার বালুচরি
চাবি
খুলে নেয়
বালির স্বপ্ন ডট কম, বা ডট ডট ডট…
মুক্তির গুহ্য তত্ত্ব-তালাশ…
লালচোখ কেন ছুঁয়ে থাকে
অপার অপার সমস্ত ক্যানভাস… (ডিসেম্বর ২০১১)
শঙ্খ
অনেক
কটা আকাশ একসঙ্গে মন খারাপ করে বসে আছে
অল্প হলেও এখন তাই শ্রাবণ হচ্ছে
মাঝ-বোশেখে
ভেলা খুলে ধরছে
প্যারাসুট শরীর...
বেড়াতে
আসা পাখিরা পুলক-পালক খসাতে পারছে না
খরানদীর বাড়তে থাকা চরে
নেশা লাগ লাগ
হুররে দিয়ে
তারার দেশ আনতে
পারছে না সন্ধ্যা...
দমের
হাঁপরে গেরস্থ মাংস ফাঁকার সঙ্গে কথা বলছে
কতদূর আর নিয়ে
যেতে পারে লাস্যে ভরা গ্লাস
পুড়ছে জেনেও লাটাই নড়ে বসছে না
ঘুড়ি এদিকে
শান্তিজলে ওম শান্তি...
ছায়াপথগুলো
খুলে গেলে নীহারিকায় প্রবেশ করতে পারত শঙ্খ
শঙ্খ-লাগা
বলে না
সাপ সাপিকা
মিলন অশান্ত…
মনখারাপি
আকাশগুলো নত হয়ে এলেই
অনুভবে আসবে
ঠিক কতদূর আসা গেল... (ডিসেম্বর
২০১১)
টিয়া
সকালের পাশে স্বকাল নিয়ে শেখানো বুলি মধুরই লাগে
কচিপাতার দেশে
আমূল চালানো শেকড়
সজোর টান
না পেলে উপড়ে আসে না…
খাঁচা খুললে কোনোদিনও কাঠঠোকরা উড়ে গেল দেখেনি কেউ
তামাম দমবন্ধ
শুধু টিয়া ময়না কাকাতুয়াদের,
রুদ্ধ
করে ঋদ্ধ করা… বুলি শেখানো…
আজীবন বসে থাকার মরিয়া বিজ্ঞাপনে
কাঠঠোকরা দ্রোহ-দ্রাঘিমার দিন পেরিয়ে
এক একটা রাগ-বিরাগের রাতকে চঞ্চল করে তোলে
শেকলে আঘাত লুকোনো, তবু শিস, তবু গান
স্বয়ম্বরে বেছে
নেওয়া কুহকের নীচে আরেকটু কুহক
শস্যকণাদের
হাততালি শেষে লা-জবাব বন্দিশ…
যাকে উড়ানের প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছিল, কাঠঠোকরা না হয়ে সে কি টিয়া হয়ে যাবে! (ডিসেম্বর ২০১১)
আংটি
কিশোরী সময়ের কনিষ্ঠায় তর্জনির আংটি হয়ে থাকি
ফিরবে ফিরবে আলো
আমাকে লেখে বে-খেয়ালে।
তিমি অন্ধকার নেমে
আসার আগে জ্বলে ওঠে তোমার হীরেখণ্ডগুলি
কাকে উৎসর্গ করি
এই অহংকার, আর লোহা অতীত!
স্মৃতিমাখা
গোধূলী তুমি নিজেই নাহয় আলোর আংটি হয়ে যাও…
শরীর থেকে হলুদ বাদামি খসে পড়ছে পাতার প্রবীণে
খেলুড়ে সন্ধি-ক্ষণ রং বদলে মোহ-মৃতের দেশে যেতে যেতে দোলনা হচ্ছে
আর ফিরে ফিরে
দেখছে সবুজের সম্ভাবনা এখনও কি রয়েছে!
কিছু কথা পাহারা দিয়ে নিয়ে আসা গেল এতদূর
পালাতে চেয়ে,
উড়তে চেয়েও, পারেনি।
চিলেকুঠুরির এইসব
কথাদের পাজামা কিংবা উড়নি
চকমকি ঠুকে আগুন
জ্বালাতে চেয়ে কান্নায় ভিজেছ।।
জমে জমে হয়ত পাথর সখেদে
ভেতরের পাথরটাকে চ্যালেঞ্জ
ছুঁড়ছে
আর পাহারাদার আমি
তাদের কনে-দেখা আলোয় ফেলে আংটি হতে থাকি… (জানুয়ারি ২০১২)
শিরোনামহীন
কবিতা
১৬
ক
জলের আঁচড়ে
ক্রোধ লেখা
আঁচ
না-বুঝ
বালির শিয়রে
মিনারের রাত সব
ভার নামিয়ে রাখে
মায়া আলোয়
খেলা চূড়ার সংকেতে
জলের থাবায়
চাঁদের চিলিক
নখ হয়ে আসে...
খ
খুবই একা লাগলে
ছায়াসঙ্গ
করুন
কথা চা চুমু
সুড়সুড়ি টা-টা রিপিটেড ও রিভার্সলি
দুলুন না
দুলুন
দোলনায়
বসুন
চুপ ও চশমার
কাচে ‘সাওন কি ম্যায়হিনা’
দেখবেন, একার বোকাটা চালাক হয়ে উঠছে... (০৭/০৫/২০১৭)
১৭
জলভাব আমার
আর জলটান গেলো না…
বাস্প তোয়াজে জল আর কুল-কুলে বরফ
সে-ও তো জলই…। একলপ্তে
কিছুটা, টানে গভীরে।
কীভাবে লেখা হতে পারে, সম্ভাবনাই ছিল না যার!
হেসে উঠতে পারে কলম,
চোখের কালি
তবু তো ভরে নিয়েছি
সে-ও তো জল…। আমি আর আমার
মধ্যে
ঝুলতে থাকা সেতুসময়টাকে
ভাসিয়ে নিয়ে যায়…
আগুনের সামনে অঙ্গীকার করা ভিখিরি হাত
অঞ্জলী ভরে যা নেয়,
সে-ও টিউকলের জল…
পথ-আবহে স্বরলিপি মনে হয়…
মনে হয় বর্ণমালার
হৃদয় ফুঁড়ে সাঙ্গীতিক চিহ্নগুলো
ভিখিরির ঝোলা থেকে
এই, এই তো বেরোলো…
ভিখিরি বোঝে না কখন
সে নিজেই এক টুকরো জল
বা কবিতা হয়ে
গেছে… (০৯/০৫/২০১৭)
১৮
আকাশে
তোর আহ্লাদ, বাতাসে ব্যালকনি,
বসন্তের কাক কাম-সেপ্টেম্বর হয়ে ঝোলে
যেন ক্যালেণ্ডার
অংশত ফোঁপানো তোর চুল
যেন ভোরের নির্জনে
থাকা কুয়াশা,
বিহারে নেমে
বড্ড বেশিই ডাকছিস হতচ্ছাড়া…
তীব্র দ্রাক্ষা… পাত্র ভরে ওঠে কা-য়ে কা-য়ে
কুহুতে কুহুতে
গলনাঙ্ক ছাড়িয়ে যায় আমলকী শীতের
কোঁকড়ানো সাপটাকে আর
বেহুঁস রাখতে পারে না,
জাগিয়েই
তোলে…
অধরোষ্ঠ লুকিয়ে ফেলা দৃষ্টি পায়ের নখে
বাতাসে গুঞ্জন,
ফিসফাস, অবিশ্বাসও…
কিছুতেই ছুঁতে দিস না তোর ছায়া আর নোয়ানো স্তনভার
থমকে চুপ বিপন্ন
কাক কোকিল হয়ে উঠছে
ভয়ের একটা গোলা গিলে
ফেলেছে গলা…
কণ্ঠায়
তার ছোপ… বসন্তের অস্তরাগ… (১০/০৫/২০১৭)
১৯
নভচর
দু-হাত ছড়িয়ে ভাসে ভূ-সমলয়ে।
একটা হাত কারও জন্য
উৎকণ্ঠ, কিছুটা ম্রিয়ও…
আরেকটায় বরাভয়
মুদ্রা ট্রেন্ডস টু ভালোবাসা…
ফড়িং-এর পাশে পাশে ছুট্টে যাওয়া একেকটা আধফোটা সকাল…
আপাত স্থিরতায় মানসশিলায়
চলমান চোখ
গোত্তা খেতে খেতে বলেনি
দাহ ও দহনের কথা।
ইচ্ছে বনাম প্রেম-লতার দ্বৈরথে
চোখের কোণায়
অবিকল কণা কণা বিন্দু…
আন্তরিক হলে পদ্ম
ফোটে,
কখনও বিম্বে
কখনও প্রতিবিম্বে…
স্কি করতে করতে
নেমে যাওয়া গ্লেসিয়ার ধরে
হুডখোলা
পাতালে প্রবেশ,
সুরাতীত
কোনও গানের রেশ…
শুধু গোলকের দুটো
হাত সানাইকে আদরে ভরে
স্মিত মুখে… (১১/০৫/২০১৭)
২০
উড়ালপুলের ছায়ায় ঝুঁকে থাকা নিন্দিত চাঁদে
যেদিন প্রথম ঠোঁট পুড়ে
যাওয়া
ছাই হয়ে যাওয়া মনতিয়াসা…
হতে হতেও না হওয়া কবিতার ক্লিশে পাণ্ডুলিপি
সেদিনই মোচাফুল হয়ে
ফুটে উঠল
পলাশ পাগল বিদ্যাস্থানেভ্য
এবচেঃ
মানুষ বলছে— কত কী করলাম, রিটার্ন পেলাম না…
গীতা বলছেন—
কর্ম করে যাও, মা ফলেষু কদাচন…
এই কনফ্লিক্ট
বা বিরোধের মধ্যে কাজের হাত-দুটো রাখলাম
পুড়ে ছাই…। চলনের পা রাখলাম…। চিতা-ভস্ম…
বুঝলাম, শরীর চলবে না। মন ছোঁয়ালাম। ধোঁয়া…
কুণ্ডলী পাকিয়ে
গাছ, পল্লবময়… ছায়া ছায়া…
কারো উদাসে হারিয়ে যাবো বলেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা
বেহালা হোক না
অসীম
শুধু এড়িয়ে যাব দীর্ঘশ্বাস
আর না-বোঝা বিমর্ষ হাসিটির কোণা…
ডানার আন্দোলন ঠিকঠাক
বোঝানো যায় না…
ফল-লাভের নূপুর
তবু নাভিকুণ্ডলী ঘিরে নিং-নিং বাজতেই থাকে… (১৩/০৫/২০১৭)
রেহেল যাত্রা
আলোচনা করলেন তানিয়া চক্রবর্তী
আলোচনার পূর্বে কিছু কথা বলে নেওয়া যাক যে কোনো কবিতাই
পাঠকের মস্তিষ্কপ্রসূত ভাবনা দ্বারা বিচার্য হয় পরে প্রথমে আবেগ থাকে। ভাবনা, ভাবনার উৎস সব এক হলেও ব্যক্তিত্ব
বা বোধ আলাদা হওয়ার কারণে ভাবনার গতি বা মাত্রা আলাদা হওয়া স্বাভাবিক ও
আপেক্ষিক।আমাকে যে কবিতাসমূহ এই প্রকল্পে দেওয়া হয়েছে তার পাঠ আমার কাছে দু’প্রকারে
এসেছে।প্রথমে আমি সেই কবিতার কেবলমাত্র পাঠক হয়েছি এবং কেবল উপভোগ করেছি তার
আলোচনা সম্পর্কিত ভাবনা আমার ভেতরে প্রবেশ করাইনি। দ্বিতীয়বার যখন আমি কবিতা পড়ি
তখন আলোচকের সচেতনতা ভেতরে আসে ফলে কবিতা পূর্বের মতো আবেগ থেকে সরে আসে। এবং
ব্যক্তিগত ভাবে একটা জিনিস মানি যে লেখনী বা কাব্য সবকিছুকে অতিক্রম করে আপাত
পর্বে লেখককে দুলিয়ে দিয়ে ভেতর থেকে, বিচারের বাইরে সেটাই প্রকৃত লেখা। কারণ সে মানুষের উন্নত
ইন্দ্রিয়কে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ঘোরে নিয়ে আসছে এটা সেই লেখার এক বিশেষ
ক্ষমতা!
এবার আসি এই প্রকল্পের কবিতায় এখানে আমায় বিছিন্ন পাঁচটি
কবিতা এবং “শিরোনামহীন কবিতা” নামক একটি ধারাবাহিক পর্বের কবিতা দেওয়া হয়েছে।যখন একটানে
প্রথমে কবিতাগুলো পড়তে থাকি কবিতার মধ্যে থেকে এক ঘোর আমার মধ্যে কাজ করছে বুঝতে
পারি; প্রথম “উল্কি” কবিতার লাইন “কার হাত ধরে কে এলো, উঠোন জানে না/সে শুধু ছোঁয়ায়
পিছল যখন/লিলিফুলে বর্ষা লেখা হচ্ছে” দেহের অনাগত
তথা যে উল্কি দেহজ নয় তাকে দেহজ করা কিম্বা এই যে তারই সাংকেতিক বিভাব যেন “কার হাত
ধরে কে এলো, উঠোন জানে া”
লেখার প্রাসঙ্গিকতায় দৃঢ় এই লাইন ভীষণ এক গভীরে নিয়ে যায়
মিহিন ভাবে এখানে কবিতা সফলতার পথে অগ্রসর
হতে থাকে। চাবি কবিতায় একটি অদ্ভুত লাইন সারা কবিতার তুল্যমূল্য মানদন্ডকে এক
লহমায় তীব্র করে তোলে ; লাইনটি হল “ ঘুমের আগে আগে ঘুমের ট্যাবলেট হেঁটে যায় লাশ পর্যন্ত”।
এরপর আসি টিয়া কবিতায়- যে সুন্দর, যে
প্রাকৃতিক আলোয় মনোরম তাকে আমরা কী কায়দায় রুদ্ধ করি অভ্যাসবশত এটা হয়ত আক্ষরিক
বোধ এই কবিতার কবির লেখায় আরো অন্যমাত্রা
থাকতেই পারে। তবে এই লাইনগুলো হৃদয়ের সমস্ত ভাব তুচ্ছ করে শুধু এই লাইনে
কেন্দ্রীভূত হয়ে নিজেকে বিচারে এনে দাঁড় করায় “খাঁচা খুললে কোনদিনও কাঠঠোকরা উড়ে গেল দেখেনি কেউ/ তামাম
দমবন্ধ শুধু টিয়া ময়না কাকাতুয়াদের,”। শিরোনামহীন কবিতার কিছু ভাল লাগার
মুহূর্তজনিত লাইনের প্রসঙ্গে এবার আসি “চুপ ও চশমার কাচে ‘সাওন কি ম্যায়হিনা’/দেখবেন, একার
বোকাটা চালাক হয়ে উঠছে...” , “খুব একা লাগে/ছায়াসঙ্গ করুন”, ‘ভিখিরি বোঝে না কখন সে নিজেই এক টুকরো জল/ বা কবিতা
হয়ে গেছে” “ মানুষ বলছে- কত কী করলাম, রিটার্ন
পেলাম না.../-কুণ্ডলী পাকিয়ে গাছ, পল্লবময়...ছায়া...ছায়া”,শিরোনামহীন কবিতার শেষ কবিতা
(২০নং) -ইসকল কবিতার অংশ বা কবিতা
সম্পর্কিত লাইন –এই কারণেই তুললাম কারণ আমার দুই মূহূর্ত; প্রথম ঘোর
লাগা পাঠক, দ্বিতীয় আলোচক-পাঠক দুই ক্ষেত্রেই এই অংশগুলোর থেকে আমি বেরোতে পারিনি ফলে
এই অংশগুলো কবিতার মধ্যে এসে কবিতাকে যে বিশেষমাত্রায় নিয়ে গেছে এবং তা ইতিবাচক
ভাবেই মনকে আলোড়িত করে তা অস্বীকার করা যাবে না। সামগ্রিক কবিতায় জীবনের
দ্বন্দ্বপ্রবণ মুহূর্তগুলো সুচারুভাবে কাউণ্টার করা হয়েছে তা এমনমাত্রায় যে গভীরের
গভীরে যেতে ইচ্ছে করে পরিণামের কথা না ভেবে। এইখানে কবিতা শক্তিশালী সে টেনে ধরে
বশীভূত করে নিয়ে যেতে সক্ষম। আসলে প্রথমপর্বে পাঠক হিসেবে পড়ে আমি বহু অংশেই এর
প্রভাবে ঢুকছিলাম যা আমায় তাড়িত করছিল এই কবিতা সম্পর্কে আমি তাৎক্ষণিক
দ্বিধাহীনভাবে আকৃষ্ট হচ্ছিলাম।এবার খুঁটিয়ে পড়ার পালা তথা আলোচকের দায়ের জন্য আমি
আবার কবিতাগুলো পড়ি, পূর্বে যে অংশগুলোর কথা বলেছি সেইগুলো আমার কাছে
দুইপর্বেই (পাঠক, আলোচক) সমান ভাল লাগার থেকেছে এবং মনে হয়েছে কবিতায় উপস্থিত সবচেয়ে মুখ্য ও
কেন্দ্রীয় শক্তিশালী অংশ যা কবিতাকে যে কোনো প্রাথমিক পর্বের পাঠককে মথিত করতে
পারে।
পাঁচটি বিচ্ছিন্ন কবিতা সম্পর্কে আমার তেমন কোনো দ্বিমত
নেই তবে শিরোনামহীন কবিতার ক্ষেত্রে ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি কবিতার গতি কোথাও
কোথাও প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলছে; হয়ত কবি জানেন তার গতি কোথায় কিন্তু পাঠক তথা আলোচক
হিসেবে আমার মনে হয়েছে লেখাগুলি তথা কবিতাগুলি
প্রথমে যে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে ক্ষণিক পরেই পাঠককে (আমার মতো পাঠককে)
সেই উক্ত পথের নাগাল দিতে পারছে না। আবার এই শিরোনামহীন কবিতার শেষ অংশে “মানুষ
বলছে- কত কী করলাম, রিটার্ন পেলাম না.../ -কুণ্ডলী পাকিয়ে গাছ, পল্লবময়...ছায়া...ছায়া” এইখানে সেই
প্রসঙ্গ কবিতার দাপট হঠাৎ এক অপ্রত্যাশিত মুগ্ধ করার মতো পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
পুনরায় সেই কথায় শিরোনামহীন কবিতাগুলির ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক ভাবতে পারছি
না কেবলমাত্র ওই পথের বিভ্রমজনিত কারণ কবিতাগুলিতে ছেয়ে আছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু
এরপরেই সম্পূর্ণ কবিতাগুলিকে দেখলে এবং আমি যেটুকু সময় তার সঙ্গে কাটালাম তাতে আমি
শেষে হাসতে পারি , ভেতরে ভেতরে কোথাও নিজের ভাবনাকে মেলে ধরতে পারি বলে
এটাই বলব এটাই যদি কবির ভাষা বা ভাবনার আঙ্গিক হয় তাহলে কবির কবিতা সম্পর্কে
দ্বিধাহীনভাবে “কবিতা” সম্পর্কিত আস্থা রেখে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছি।
বুঝতে
না পারা কিম্বা অজানা কবিকে আমার শুভেচ্ছা...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন