
কবির নাম, বয়স, লিঙ্গ, ঠিকানা ইত্যাদি যা কিছু কবিতার জন্য জরুরি নয়, তা আমরা মুছে দিয়েছি। আর এভাবেই ১০টি কবিতা পাঠানো হয়েছে অন্য এক কবির কাছে- আলোচনার জন্য। শুধু ১০টি কবিতা, আগে পরে নাথিং। আমাদের সাথে রুমালচুরির এই খেলা খেললেন ১৯ জন কবি।
এখানেও কবির নাম ছাড়া ১০টি কবিতা রাখা হল, সঙ্গে থাকলো আলোচনা। কবির নাম জানার রাস্তা কবিতার নীচ দিয়ে গেছে। তবে আমরা বলবো রুমালচুরির এই খেলায় আপনিও থাকুন। কবির নামটা না হয় একটু পরেই জানলেন।
১০টি কবিতা
জন্মাষ্টমী
তোমার জন্য আর অপেক্ষা ক'রে কোনো
ক্ষতি নেই। আগ্নেয়গিরির
মতন যেসব স্মৃতি এখনো অপেক্ষাতুর। সাম্প্রতিক
জানা গেল আইসল্যান্ডেরও নীচে শতাধিক ভলক্যানোর
অস্তিত্ব রয়েছে
অথবা যেসব স্মৃতি মহৎ ও বর্ষণলিপ্ত মাধবীলতায়
বিদ্যুৎ রেখার মতো আঁকা হয়েছিল। ওই ক্ষয়াটে ঝিঁঝিঁর
ডাক শুনে যদি মনে পড়ে
রূপের অমোঘ সেই চলাচল। পরপর জীবনাতীতের
আধপোড়া বালুচরে দাঁড়িয়ে দেখেছে যারা কালনাগিনীর
ফণা হয়ে রাজছত্র দোলে
ভয় পেয়েছিল তবু আইসল্যান্ডের দিকে অভিযাত্রী জাহাজের মতো
জানু মুড়ে যেসব স্মৃতিরা আজো বসে আছে। ক্ষতি নেই
এমনকী লাভক্ষতি নেই
ঝুমুর ঝুমুর
কোথায় হারিয়ে গিয়েছ, ঝুমুর? যেখানেই থাক
নিজেকে লুকিয়ে রেখো
বুনোদের পায়ে পায়ে
শ্যামই তোমার আদিম ধ্বনির মতো
শ্রীমতী তোমার প্রারব্ধ আর বনারণ্যের বুকে
আগুনের নাচ। মহীরুহ পোড়ে। ঝুমুরে ঝুমুর বাজে
রূপের অঙ্গে একমুঠো ছাই, ভস্মে রূপাঙ্গে
যে বাঁশি এখনও দোলা দিয়ে যায়,
যে আর্ত অনাহত
সুরের আভাসে পূর্ণাভিসার এখনও ফুরোয় না যে
জড়িবুটি
তখনও অবাক হওয়া বাকি ছিল। তার আগে যা কিছু বলেছি
সশস্ত্র করুণাঘন। চাষাদের পান্তাভাতে ঈষৎ থ্যাঁতলানো
মরিচাভ জলের মতন
যা কিছু হয়নি বলা ধীরে ধীরে প্রবাহিত হয়ে যায়,
হয়ে
যেতে পারে মহাবোধিদ্রুম থেকে ঝরে পড়া পাতাদের মতো
জলচেতনার দিকে
যা মূলত যদি জলসিক্ত হয় তবেই গঠিত হবে কিছুটা সম্যক
জড়িবুটি। চতুর্দিকে, পাথুরে দেওয়াল, নোনতা, যেহেতু বারুদলিপ্ত
চেটে বেঁচে আছি
ইচ্ছাময়ী
একবার, মনে পড়ে,
দিগন্ত উদিত হয়েছিল
তোমার অধরে
নক্ষত্র সম্পূর্ণ হল,
রাত্রিও রহস্যাতুর পূর্ণতর হল
একবার, মনে পড়ে,
একটি ধনুক থেকে ত্যক্ত তির
ধরিত্রীর চতুর্দিকে খড়িবাড়ি প্যারি কমিউন
তোমারই ইচ্ছায় যদি পরবর্তী ভোরবেলা অরুণাচলের আগে
শিশিরবিন্দুর মতো ধুলোয় লুটিয়ে পড়ে, যদি
তিরের আভায় রাখা ওষ্ঠাধরও ধুলায় ধূসর হয়ে ওঠে
অনির্ধারিত
অথচ সন্ধ্যার আগে তোমাকেও
পাথরের প্রতিমার মতো
ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাবে
চিন্ময়ীর করতলধৃত দিগন্তের
জবায় জড়ানো অন্ধকার
সন্ধ্যারতির পরে রুদ্রের আঁধারে
জানিনা তোমাকে আমি কিভাবে সাজাব কোন
রক্তের চন্দনে
মাঠে মাঠে
ধানদূর্বার মতো কয়েকটি ক্ষয়ক্ষতি রইল। আমার
আশীর্বাদ
মাঠে মাঠে ছড়িয়ে দিলাম
কেঁপে উঠল ফসলখেতের বুকে সবুজাভ কুঁড়ি
হৃদস্পন্দনের মতো। অপাঙ্গে, দিগন্ত প্রণত
অন্যদিকে দিনাবসানের সেই সর্বগ্রাসী ইতিহাস যারা
বরাভয়মুদ্রার মতন
প্রসারিত হাতটিকে নুলো ও নির্বাক ক'রে দিতে চেয়েছিল,
দিতে চায়
একটি দুটি দীঘির উপকথা
যেখানে সৌন্দর্য নেই সেখানে আবার যদি আহুতির রূপ
শ্যাওলার মতো ঘন এবং পিচ্ছিল পুরু প্রাচীনতা নিয়ে
চলাচল পূর্ণ করে। যাওয়ার আগেই যদি দীঘির ছায়ায়
আভাষিত সাঁঝের আলতার মতো ফিরে আসে কেউ ফিরে আসে
যেখানে মঙ্গলদীপ নেই তবু সেখানেই তার
দীঘির গভীর জল দিয়ে ধোয়া পা দু'টির সংকেত চিহ্নকে
কুড়িয়ে নেওয়ার মত ছল ক'রে একটি কাঁঠালিচাঁপা গাছ বুঝি
নুয়ে পড়েছিল
কেন নুয়ে পড়েছিল? কেন সে জানেনি তার শিকড়ের ফাঁসে আজও
আটকে আছে সদ্যোজাত শব
রেখে যাওয়া
নির্মাল্যের মতো সেই অন্ধকারে কয়েকটি অর্চনা
কে যেন গিয়েছে রেখে। তার
কোষা ও কুষির মতো চন্দনকাঠের মতো মধুপর্কের
বাটির মতন
অসংলগ্নভাবে পড়ে রইল যাকিছু আজও প্রার্থনার ধূসর অতীত
যাকিছু জ্ঞানের আগে জ্ঞাত হয়, হতে পারে প্রজ্ঞার মতো
উপজাত
অথচ যা শুধুমাত্র দিকচিহ্নহীন
একটি নীরব মন্ত্র হয়ে দেখা গিয়েছিল যুগান্তরের হৃদয়স্পন্দনে
অতর্কিত
অতর্কিতে অনাবিষ্কৃত
মশালের কথা মনে পড়ে
তরাইয়ের বোবা বৃষ্টি। রূঢ়
সদ্যোজাত মেঘের আঁধার
সর্বাঙ্গে দশক সত্তর
বিশশতকের দাবানলে
স্ফুলিঙ্গের অপরাধী মুখ
স্ফুলিঙ্গের অপ্রতিভ চোখ
মশালসংলগ্ন পোড়াকাঠ
হে অনাবিষ্কৃত, দেখা দাও
বাংলার কবিতা
আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল হয়ত হাজার
বছর পরে লেখা বাংলা কবিতা
যাকে ছুঁয়ে সন্ধ্যামনির মতো জেগে আছে যে নয়নদিঠি
যার আধোনিমীলিত চোখে যেটুকু অজস্র ছায়া
মনে হবে যুগান্তরের মেঘে মেঘে কতদিন পরে আজ যুগযুগ
ছড়িয়ে পড়েছে
পিদিমের অঙ্গ থেকে লাজুক কাজল
মুছে দিয়ে
অথবা সে' কাজলের মৃদু টিপ আঙুলে আঙুলে তুলে
কপালের মাঝখানে, যেন - বা ভ্রু মধ্যে, তার তৃতীয় নয়ন
এঁকেছিল হাজার বছর পরে বাংলার কবিতা
আলোচনা করলেন সব্যসাচী হাজরা
মাত্র ১০টি কবিতা। এবং তা পড়ে একজন কবির লেখার মূল্যায়ন করা অসম্ভব।হ্যাঁ তবে ওই ১০ সম্পর্কে কিছু অবশ্যই বলা যায়।বুদ্ধদেব বসুর একটি প্রবন্ধে পড়েছিলাম অমিয় চক্রবর্তী সম্পর্কে সম্ভবত “কবিতা মাত্রই মানুষের আত্মা থেকে উদ্ভূত…” আত্মা কি সেই চিৎকণা যা সর্বত্র পরিব্যপ্ত! চেতনার মুলতত্ত্ব? এই বিশালতার মধ্যেই কি মিশে আছে আমাদের ধরা অধরাগুলো? আমি বলি ধরাশাল অধরাশাল। এই ধরা কি আমার পরিচিত পৃথিবী? আর অধরা কি অপরিচিত? আর যা অধরা তার পরিচিতির সম্ভাবনা? সত্যিই ভাবতে গেলে শেষ হবে না। এসব এসে ভিড় করে আর ভাবনা চলতেই থাকে।
“আইসল্যান্ডেরও নীচে শতাধিক ভলক্যানোর অস্তিত্ব রয়েছে” সেই ভৌগোলিক স্থান, সেই আগ্নেয়দ্বীপ? কবি তার উচ্চারণে আইসল্যান্ডের পরে একটি
‘ও’ যোগ করলেন। এবং আমরা আরেকটু সচেতন হয় ভলক্যানো+আইসল্যান্ডের একত্র অবস্থানে আবার বিস্ময় প্রকাশ করলাম।এই রেফারেন্সে অগ্নুৎপাতে যার উৎস তার সাথে সাথে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম সেই ভাৎনা হিমবাহটিকে। না এভাবে নয়।
একজন জেগে ওঠে।একজন খেলে যায়।একজন সংঘর্ষের মুখোমুখি। টের পাই বহমান সময়ের ধারা বেয়ে প্রকাশিত/অপ্রকাশিত আরেক বহমানতা।ছুঁতে চাই অথবা চাই না। পারি অথবা পারি না।
কখনো পূর্ণাভিসার, শ্যাম, বাঁশি ফিরিয়ে নিয়ে যায় অভিসারিকা সেই মনের কাছে। প্রিয়মিলনের জন্য দুঃখকষ্ট বরণ? আর তাই কি ঝুমুরে বসেছে? সেখানে কোনো ভণিতা নেই? কেউ মনে করেন ঝুমুর বা নূপুর শব্দটির সাথে ঝুমুর গান স্মপর্কযুক্ত। বিদ্যাপতি, গোবিন্দ দাসের পদেও এই ঝুমুরগানের কথা পাওয়া যায়।সেই অতীতের সুর, তাল আজও
… রাধা-কৃষ্ণের সেই প্রেম, বিরহের কথা ঝুমুরে ঝুমুরে… কে জানালো অভিসারের কথা? অথবা ঝুমুরের জন্য আদিম সেই ধ্বনির জন্য কবির ভাবনারূপ…
কখনো ফিরে যাচ্ছি সেই অশ্বত্থ গাছের নীচে। বোধিজ্ঞান লাভের সেই স্থান যেখানে রয়েছে বোধিপালঙ্ক।
কখনো আবার যোদ্ধার ধনুক থেকে নির্গত তীর, তীরে তীরে সাজানো পরিসর… যা বিদ্ধ করছে। শ্রমিক-মালিকের চিরদ্বন্দ্ব।বুর্জোয়া শাসনের পতন ইতিহাস। শ্রমিকশ্রেনীর বিজয় গাঁথা। ইতিহাসের গা বেয়ে কবিতার আলো-আঁধারে পড়তে পড়তে সত্যিই মনে হয়
“প্রার্থনার সেই ধূসর অতীত”।
না এভাবেও পরপর বলা যাবে না।
আদি অনন্ত এক অস্তিত্ব থেকে কবির মনভূমিতে টের পাই সেই সত্যাসত্যের বিচরণ। তার গ্রন্থনা। পুরাণ- গ্রন্থির সেই আদিরসও তিনি ধারণ করেছেন। এবং তার ভাবনার মুখে ভাষা এসে বসেছে।তাঁর চেতনা সেই পথে জাগ্রত। বহমান যা নিত্য তার সাথে তিনি নির্মাণে জুড়ে দেন প্রাচীন উৎসগুলোকে যার ক্ষরণে তিনি দ্রষ্টা হতে চান।এই বিশ্বলোক ও লোকাতীতের কথায় কখনো এক সম্পর্ক কখনো এক সংঘর্ষ টের পাই।
ধীর অথচ গম্ভীর এক উচ্চারণ যেন এক ঋষির জগতানুসন্ধানের প্রকাশ।যুগ যুগ ধরে জেগে থাকে, বাংলা বলে নয় শাশ্বত কবিতার উচ্চারণগুলো্, উদযাপনগুলো ধ্রুপদী প্রকাশে।
কবিতাগুলোতে ব্যবহৃত কিছু শ্যাম, প্রারব্ধ, পূর্ণাভিসার, মহাবোধিদ্রুম, চিন্ময়ী ,জবা, সন্ধ্যারতি, রুদ্র, চন্দন, ধানদূর্বা, আশীর্বাদ, বরাভয়মুদ্রা, আহুতি , মঙ্গলদীপ, অর্চনা, কোষা-কুষি, মধুপর্ক, প্রার্থনা, মন্ত্র, তৃতীয় নয়ন…
এই কি সেই ভাববিশ্ব? চলাচলের দীক্ষা। পুরাণ, মহাকাব্য, লোক, লোকাচার, পুজা, মন্ত্র, তন্ত্র আমাদের মনোভূমিতে যুগ যুগ বহমান সেই সব স্রোত যার মধ্যে কবির মুক্তি বা বন্ধন। সেই আগুনে পুড়ে যাওয়া যায়, আবার দাঁড়ানো যায় নিজের মুখোমুখি। ‘আমি’কে খোঁজা এবং আমিকে যা শেষ পর্যন্ত ‘তুমি’-র ভেতর। “তোমার জন্য আর অপেক্ষা ক'রে কোনো / ক্ষতি নেই।” , “একবার, মনে পড়ে, দিগন্ত উদিত হয়েছিল / তোমার অধরে”, “সন্ধ্যারতির পরে রুদ্রের আঁধারে/জানিনা তোমাকে আমি কিভাবে সাজাব কোন/রক্তের চন্দনে” এই তুমি কে?
যার আয়নায় নিজেকে জানা যায়?
নাকি নিজের সব মিথ্যে মনে হয়? পড়তে পড়তে বারবার প্রশ্ন জাগে একি আধ্যাত্মিকতার আলোয় নিজেকে দেখা?
আমরা সীমাবদ্ধ। কিন্তু তার মধ্যেই আমাদের প্রকাশ। আমরা তার মধ্যেই সীমাহীন।পুজার উপকরণ আছে। আছে নির্মাল্য, মধুপর্ক, চন্দনকাঠ।কিন্তু সেই নীরব মন্ত্র! এখানেই ভাবনার আকাশ কবিতাটাকে মেলে দেয়। জাগিয়ে তোলে সেই নীরবতার রহস্যকে। ‘আমি’ আবিষ্কার করে অনাবিষ্কৃত ‘আমিকে’।আনন্দ, ভয়, আবেগ, যন্ত্রণা, হাসি , কান্নার মধ্যে তার যাপন আরও কতো কতো। আর তার ভেতরের আলো , অন্ধকারগুলো আমাদের কল্পনায় বিস্ময় ও রহস্যের জালে ঘোরাফেরা করে। আর এখানেই বোধহয় আমাদের সার্থকতা। কারণ নিজেকে জানাও যেমন ফুরোয় না, অন্যকেও তাই।
“ঠোঁট বা চোখের পাতা খুলতে ভয় হয়/পাছে ছিঁড়ে যায় ধ্যান।” সুধীর দত্তের ‘মহাবিষ্ণু’ কবিতার দুটো লাইন মনে পড়লো।
এই ধ্যান সেই নীরবতাকে কোথাও গম্ভীর করে কোথাও গভীর কোথাও এই দুই। শ্যাওলার পিচ্ছিল এক প্রাচীনতা নিয়ে সেই দীঘি এক ইতিহাস বহন করছে। আর তার পাশের সেই কাঁঠালিচাপা গাছই যেন কবিতাটির সেই চরিত্র যা জানা অজানার মাঝে কবিতাটির রহস্য আরও গভীর হয়েছে।কেউ এলো।কখনো মনে হয় লক্ষ্মী এলো? সে কি বাঁধা পড়েছিলো?
আলাদা স্বরে ৭০দশক। কিছু শব্দে সে আবেগ লক্ষ্ করা যায়। তার দহন
, নীপিড়ন, তার যা কিছু অন্ধকারে গেল যা কিছু দশক চেনালো, কবি বলতেই পারেন ‘হে অনাবিষ্কৃত , দেখা দাও’।
ভালো মন্দের মাঝে চিরসংঘর্ষ। তার দুতরফেরই যুক্তিজাল আছে। সময়ের সাথে সাথে সেই যুগপৎ ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার মাঝে মানুষ যেন মানুষেরই দুই রূপে উত্তেজিত ও ক্লান্ত। এক হাত যেমন সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকে মানুষের ভালোয় উত্তোলিত সেই হাতই যেন কেউ ভেঙে দিতে চায় তার সমস্ত শক্তি দিয়ে। সময় কখনো আশীর্বাদ হয়ে নামে কখনো সেই অভিশাপের ভয়ঙ্কর হাসি হাসতে থাকে। কালের নিয়মেই সভ্যতার উত্থান, পতন।
কবি মাত্রই একক। তার দেখাগুলো। তার স্মৃতি। তার অভিজ্ঞতা, বিস্ময়, বাস্তব চেতনাপুঞ্জ।সে দাঁড়ায় তার পারিপার্শ্ব দেখে, মগ্ন উচ্চারণে সাজিয়ে তোলে তার দেখা ও কল্পনার জগত। কবিতাগুলো পড়ে মনে হয় যাপন সঞ্জাত অভিজ্ঞতা ও স্মৃতির আলিঙ্গনে সে সেজে উঠেছে তার পড়া, জানা, তার অস্তিত্বের মহিমায়। তৃতীয় চোখ যেন সেই শক্তির আধার যা একজন দ্রষ্টার যা যুগ ছাপিয়ে যুগের কাছে তার দৃষ্টি রেখে যায়। পাঠক খুঁজে নেয় তার মতো করে।
এখানে কবিতাগুলো নির্মাণের দিক থেকে অন্যরকম নয়। আমার লাগে নি। আমি যে নতুন কবিতাভাষা সন্ধানের কথা ভাবি, এই লেখাগুলোয় হয়তো সেই চেষ্টা নেই।আমার কবিতা প্রকাশের সাথে এর কোনো মিল নেই।থাকার কথাও নয়। তবুও পড়ে অবাক হয়েছি, ভাব ও দর্শন মিলিয়ে জীবনকে ছেঁকে নেওয়ার এক প্রচেষ্টা দেখছি। আলো ও অন্ধকারের রহস্যে ভরপুর সেই বোধের গভীরে আমরা ডুব দিচ্ছি, মাথা তুলছি। হয়তো যা পাচ্ছি তার সবটাকে প্রকাশ করতেও পারছি না।হয়তো এই ভাবনার কাছে এই ভাষারই প্রয়োজন।
কয়েকবার এই লেখাগুলো পড়ে মনে হচ্ছিলো এখানে আমার সত্যিই বলার কিছু আছে? পড়ে নতুন কাব্যভাবনায় আমি উজ্জীবিত হচ্ছি না। কিন্তু আরও কয়েকবার পড়ে মনে হোলো এ চৈতন্য থেকেও আমার উপলব্ধি করার আছে।যে কোনো মননশীল পাঠকের কাছেই তাই । যে কোনো রচনাই কিছু আলো রেখে যায়।‘মানুষ’ থেকে ‘ঈশ্বর’ পর্যন্ত যদি একটু একটু করে হাঁটি তাহলে দেখা যাবে এই শব্দদুটোর মধ্যেই আছে সেই আলোছায়া যার বিস্ময়, রহস্য শেষ হবার নয়।
রঞ্জিত সিংহ, সুধীর দত্ত,
সমীরণ ঘোষ,
রাহুল পুরকায়স্থ, অমিতাভ গুপ্ত, জহর সেন মজুমদার এনাদের অনেকের লেখাতেই আমি এই স্বাদ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে উপভোগ করি। স্থির হই বোধের মুখোমুখি হয়ে। এই কবিতাগুলোর ক্ষেত্রেও তাই।কবিতা ধরে ধরে ব্যাখ্যা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাতে আমি অক্ষম। আর বেশি বলা অবান্তর।কারণ আমার কবিতা ভাবনা প্রকাশের জায়গা এটা নয়। শুধু আমার চেতনায় ও কল্পনায় এরা যা যা উপকরণ নিয়ে আমার সামনে উদ্ভাসিত হোলো এবং যা হোলো না তার স্বল্প প্রকাশ একান্তই নিজের মতো করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন