রুমালচুরি- ১০



  

       কবির নাম, বয়স, লিঙ্গ, ঠিকানা ইত্যাদি যা কিছু কবিতার জন্য জরুরি নয়, তা আমরা মুছে দিয়েছি। আর এভাবেই ১০টি কবিতা পাঠানো হয়েছে অন্য এক কবির কাছে- আলোচনার জন্য। শুধু ১০টি কবিতা, আগে পরে নাথিং। আমাদের সাথে রুমালচুরির এই খেলা খেললেন ১৯ জন কবি।


       এখানেও কবির নাম ছাড়া ১০টি কবিতা রাখা হল, সঙ্গে থাকলো আলোচনা। কবির নাম জানার রাস্তা কবিতার নীচ দিয়ে গেছে। তবে আমরা বলবো রুমালচুরির এই খেলায় আপনিও থাকুন। কবির নামটা না হয় একটু পরেই জানলেন।




  ১০টি কবিতা


   রাজহাঁসগুলি

‘নিজের সঙ্গে কথা বলতে চাই’ বলে
এই অসহ্য গুমোটের মধ্যে আমি শেষবারের মতো
ফিরে চললাম সাদা রাজহাঁসগুলির কাছে
তারা কাদার মধ্যে ঠোঁট ডুবিয়ে ভুলে যেতে চাইছিলো
                                                অতীত

‘জল শুকিয়ে গিয়েছে কোত্থাও জল নেই
কোত্থাও জল নেই’ বারবার বলছিলো তারা
বলছিলো সমুদ্র কত দূরের হয়ে গেছে আর
এই পুকুরটাও কেন ধরে রাখতে পারে না ঢেউগুলোকে
নদীর সঙ্গে ঢেউ-এর আর ঢেউ-এর সঙ্গে পুকুরের
কী অদ্ভূত আর বিশাল অমিল এই কথা ভাবছিলো রাজহাঁসগুলি
ভাবছিলো কারা কারা একদিন জলের জন্য বন্ধু ছিলো তাদের
আর থ্যাঁতলানো পায়ের ছাপ সহ কারা আজ ফিরে গিয়েছে ঘরে
এই গুমোটের মধ্যে রাজহাঁসগুলি ভাবছিলো
আমিও একদিন কাছে ছিলাম তাদের হায় তাদের 

কে ঈশ্বর

ঈশ্বর কে?
পাড়ার মাস্তান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর
আর ওই মহাসিন্ধুর ওপারে বসে রয়েছেন যিনি
                                                        তিনি
আমরা তাঁর মাসল দেখে ভয় পাই,
                        জলদস্যুদের কথা মনে পড়ে
তিনি কে, তিনি কেন
        ভাবতে ভাবতে, জানতে জানতে
        পাতা খসে পড়ে, বৃষ্টি হয়
                                জন্ম নেয় নতুন ওয়েবসাইট
                                রোদ মাখে হাওয়া খায়
                                হৃষ্টপুষ্ট হয়
ঈশ্বর কে?
গোঁসাইদের ছাতে নাকি একবার হুপ্ করে এসে পড়েছিলেন
                                                তিনিই ঈশ্বর
তাঁকে পুজো করি, ফুলবেলপাতা দিই, কান্না দিই
বলিঃ
        মাসল দেখিও না, ঈশ্বর, মাসল দেখিও না
                স্বপ্নে থেকো, কষ্টে থেকো
                        মাসলে থেকো না

ঈশ্বরের বাগান

ঈশ্বরের বাগানে আমাদের জন্য
ফলমূল ছাড়া কিছু নেই
ঈশ্বরের বাগানে মৃত অশ্বের ছবি
নিভু নিভু লন্ঠনের আলোয় জোনাকি, প্রজাপতি
ঈশ্বরের বাগানে ফাঁকা প্রান্তর
হু হু করে ছুটে আসা হাওয়া, ফিসফিস করে কথা বলা ---
জল দাও জল দাও জল দাও আমাদের
ঈশ্বরের বাগানের মেঝে মার্বেল পাথরের
ছোটো ফুলেদের গাছ নেই শাখা নেই পাতা নেই
শুধু ফলমূল আর ফলমূওল
নিভু নিভু লন্ঠনের আলোয় ছোটো ছোটো জোনাকি, প্রজাপতি
ঈশ্বরের বাগানে শুধু অন্ধকার আর রাত্রি আর জোনাকি
                                                আর প্রজাপতি
জল নেই      জল নেই      জল নেই

থিয়োরি অফ ডাইজেশন

সাপের মতো মাথা যে লোকটার
তাঁকে বললামঃ ‘প্লিজ আমাকে গিলে ফেলুন’
যেন বুঝতে পারেনি এভাবে অবাক হয়ে
লোকটা দেখল তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আমি
কিভাবে ক্রমশঃ পালটে পালটে একবার
ডানলোপিলো গদি, একবার ঘরমোছার ন্যাতা আর একবার
পুরু মোটা নারকোল দড়ির পাপোশ হয়ে গেলাম
গিলে নেবার জন্য এগুলো উপযুক্ত নয়
এই চামড়ার দেহ থেকে তাহলে মেলানিন তুলে দিয়ে
আমাকে হতে হতো আরও ফ্যাকাশে, রক্তশূন্য
তাহলে দয়া হতো, তাহলে প্লেটে সাজানো
ফর্সা স্যান্ডউইচের মতো আমার একটা খাদ্য খাদ্য ভাব আসতো
খক করে আটকে যেতাম না গলায়
সাপেরাও বলাবলি করতঃ ‘বা! এবার বেশ নরম ও কোমল
                                                হয়ে উঠেছে’
কিন্তু যতক্ষন বিছানার মতো ঘরমোছার মতো পাপোশের মতো
আমার বিকিরণ হবে, বিপবিপ শব্দ হবে জলীয় পেজারে
ততক্ষন সেই গরম লালাময় শোবার ঘরে আমার ঢোকা হবে না
যতই বলি না কেন
‘আমাকে গিলে ফেলুন, আমাকে গিলে ফেলুন, প্লিজ’

আলু চাষ করে যে লোক

আলু চাষ করে যে লোক
অন্ধকার ট্রেনের মধ্যে সে ছিল আলুর স্বপ্নে
আমি আর বাবা আমার
ভাবছিলাম এই মাটি মাখা লোকজনদের নিজেদের পৃথিবী থেকে
যদি কোনওদিন একখন্ড মাটি
একখন্ড আলু তার গায়ের ঠান্ডা আর ছোটোখাটো ছেলেমেয়ে
উঠে আসে ট্রেনে চড়ে আমাদের বাড়ি
কী ধন্ধুমার হবে তবে
কী শোরগোল পড়ে যাবে এত আলু এত বাচ্চা
এত মাটি আর ঠান্ডা সামলাতে
আলু চাষ করে যে লোক তার কাছে
এসব কিছুই না
কেমন স্বাভাবিক মুখে সে বললঃ
ওরা আলু দিচ্ছে না ঠিকমতো
গড়বেতা গিয়ে আর লাভ নেই,
আলু আনতে আনতে
আলু চাষ করতে করতে,
তার পৃথিবী গোলমাল ও লোকজনের তেমন মূল্য নেই
আমি আর বাবা আমার
কোনওদিন গলমাল দেখেনি, বাচ্চা দেখেনি, আলু দেখেনি ক্ষেতে
এমন দু’জন, ভাবছিলঃ
আলু কেন না গেলেও
যদি গড়বেতা যাওয়া যায় একদিন
শান্ত-শীতল ঘরে আলুদের সাথে একদিন
কী আনন্দেই না কাটবে তাহলে

ঈশ্বর তোমাকে বলছি

ঈশ্বর আমাদের কুয়োগুলোয় লাভা ভর্তি করে দাও তুমি
নলকূপ টিপলেই যেন বেরিয়ে আসে তরল আগুন
ঈশর মাঠে ঘাটে ধানবীজ নয় আংরা ফলুক অল্প
আর আমাদের বারান্দার গ্রিলের বদলে
লম্বা দন্ডের মতো দাঁড়িয়ে থাকুক পান্ডুর সকাল বিবর্ণ বিকেল
ইশ্বর আমাদের ড্রয়িংরুমে আমারা গনেশ পাইন রাখব না আর
বদলে দেখো যেন চাপ চাপ রাগের মতো
        জমাট বেঁধে থাকে অন্ধকার
আমরা কুয়ো থেকে লাভা তুলে
আমরা নলকূপ থেকে আগুন তুলে
ঘষে ঘষে, নারকোল ছোবড়া দিয়ে পুছে পুছে
                        তুলে ফেলব দাগ
ঈশ্বর মিউনিসিপ্যালিটির কল দিয়ে
দশতলা অ্যাপার্টমেন্টের ট্যাঙ্কি থেকে
দেখো যেন গলগল করে বেরোতে থাকে লাল আগুন
আমাদের দিনের ভেতর আমাদের রাত্রির ভেতর
জাহান্নাম আর ডট কমের ভেতর
ফসল চাই না, দরজা জানলা চাই না, গনেশ পাইন না
কুয়োগুলয় অল্প আগুন দিও আর নলকূও ভরে ভরে অন্ধকার 

আপেল শহরের সম্রাট

আপেল শহরে আমিই ছিলাম সম্রাট
মানো বা না মানো প্রোনো কবিতার মতো
লোকেরা বারবার ফিরে আসত আমারই কাছে
যত্নের ক্রিম পালিশে যে রকম চকচক করে জুতো
সেরকম মসৃণ ত্বকের কাছে পরাজিত হওয়াই একমাত্র উপায়
সকলে বিঝে গিয়েছিল মিকসিতে পিষে গুঁড়ো গুঁড়ো করে দিলেও
ওর হাত কাটা যাবে না পা থাকবে একইরকম
আর মাথার মধ্যে র‍্যাডার রশ্মির একটা অদ্ভূত বিচ্ছুরণ
হতেই থাকবে হতেই থাকবে
এই আপেল শহরের শেষপ্রান্ত বরাবর পৌঁছে যাবে সঙ্কেত
পিঁপড়েদের মতো সাহস হয়ে যাবে সবার
একটা সিগারেট কিনলে মুফতে পাওয়া প্যাকেটের মতো
সকলে উপহার পাবে ঘরে ফেরা
আপেল শহরে সন্ধে নামবে অতঃপর
‘শুভরাত্রি ভাইসব এবার বিশ্রাম’ মালিদের এই কথা বলে
ছোটো দু’কামরার খুপরি ঘরে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়বে
একা আপেল শহরের সম্রাট 

রঙিন ম্যারাকাস

খুব দ্রুত ধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবী
মহামান্য গোল যখন জানলেন এখবর তখন
আমি হেঁটে ফিরছিলাম তেত্রিশটা উঁচু নিচু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে
হায় এই রঙিন ম্যারাকাসের তাহলে মাত্র কয়েকদিনই আয়ু
মাত্র কয়েকদিনই আর মাইও থাকব
বাকি এতগুলো বছর ভাবলাম কী কী হত
যেমন একবার ঘুরে আসা কফিক্ষেতগুলোর ভেতর
 গায়ে গাতে পায়ে কফি কফি গন্ধ মেখে নেওয়া খুব
যাতে চায়ে চুমুক দিলেও একটা আমেজ আসে কফির
একবার নামা যেত অন্ধকার সুড়ঙ্গের গভীর
আমার বন্ধুরা যারা ঈর্ষা করত খুব আর
তারা যারা ভালোবাসত নিঃস্বার্থ সবাই বলত
লক্ষ্য রাখ আলো আনতে গিয়েছে ও
এই হীন কীট কৃমির মতো না
বাকি বছর গুলো ঠিকঠাক পেলে
একবার জোরে তবলা বাজিয়ে দিতাম
একবার লাফিয়ে উঠতাম তোমাদের হাতে
বলা যায় না ঠকঠাক হলে মেরুসভ্যতার ভালুকেরাও বলতঃ
এই সেই লোক যে পকেট থেকে মুঠো মুঠো ছুঁড়ে দিয়েছে উত্তাপ
এই সেই লোক দুরমুশ হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত যে আমাদের
                                নিয়মিত খাওয়াত আখের রস
বাকি এতগুলো বছর সবাই বলত কী ভালো ছিল কী সরল
আর যাই বল চমৎকার বাজাত ওই রঙীন ম্যারাকাস

ঈশ্বর জানেন না

ঈশ্বর জানেন না
তাঁর জায়গা নিয়ে নিয়েছি আমি
এখন আমারই কথা শোনে গাছপালা
ওঠবার আগে সূর্য গ্রিট করেঃ ভাল আছেন স্যার?
হাতের মাইক্রোস্কোপ দিয়ে
সমুদ্রের সবচেয়ে তলার ছোটো মাছটির সুবিধা অসুবিধা দেখি
যেদিকেই যাই, লোকজন হাসে হেঁ হেঁ করে,আমার ভালো লাগে
ঈশ্বরকে এভাবে একলা করে , কোণঠাসা করে
মাঝেমাঝে তাঁরও খবর নিই
বলিঃ দুঃখ করবেন না স্যার, এভাবেই পৃথিবী চলে
                                এটাই নিয়ম
শুধু নিজের বাবা মরে গেলেও আমি কাঁদি না
আমিই তো ঈশ্বর
ঈশ্বর কাঁদলে - লোকে বলবে কী! 

ঈশ্বরের গুমটি

গুমটি খুলে, সাজিয়ে বসেছেন
ক্যাডবেরি পার্ক, শস্তা কন্ডোম, রঙবেরঙের রিবন
ঈশ্বর, বিক্রিবাটা কেমন?
বোয়েম খুলে ঈশ্বর লজেন্স বার করেন
                        শিশুদের দেন
লাল হলুদ কাগজ বিক্রি করেন
                        পৃথিবী রঙিন হয়ে ওঠে
আমরা উৎসব মানাই
ঈশ্বরের গুমটি থেকে আনন্দ পৃথিবীর ঘাসে ঘাসে
                    ছড়িয়ে দিই
ছোট গুমটি ঈশ্বরের, বোয়েম কম
ছোটো ছোটো আনন্দ সকলে ভাগ করে নিই
কারও কম, কারও বেশি
বোয়েম খালি হলে, তখনই বিপদ
ঈশ্বর, মাল এলো তোমার? মাল এলো?

আমরা তরুণ প্রাণ, বারবার হানা দিই,
                     জিজ্ঞাসা করি




  রূপান্তরের ঈশ্বর
আলোচনা করলেন অনির্বাণ বটব্যাল  

১.
        কিছু উত্তরেও ঘেমে ওঠে নিজস্ব গুমোট। উত্তরের সংশয়ে হেতু খোঁজা আরো দুষ্কর ... কে সে মহীয়ান উত্তরের অপরদিকে ... প্রশ্ন ? নাকি দক্ষিন ? এই সেই নিজস্ব গুমোট জমাট হয়ে গেলে কবির হাঁটা শুরু পিছনের দিকে ... “ নিজের সাথে কথা বলতে চাই’- বলে এই অসহ্য গুমোটের মধ্যে আমি শেষবারের মতো ফিরে চললাম সাদা রাজহাঁসগুলির কাছে ...

হায়রে শেষবার ... হা হা হা আর কতবার শেষবার হবে কবি কি নিজেও জানেন ? ... এই ফিরে চলাই যে আরো একটা নতুন যাত্রা আবিষ্কার। কবির জীবনযাত্রার একান্ত পাঠ- নিমগ্ন  কাদায় যে আত্মসুখ, রাজহাঁস ভুলে যেতে চায় কো্থায় কতটা জল, কোথায় জেগে আছে ‘জল নেই ... জল নেই’  চর , শুধু ঢেউএর অন্তর আত্মীয়তা ভুলে যেতে চায় পুকুর আর সমুদ্রের - সে কি কবির থ্যাতলানো কষ্টের ছাপোষা পরিবেশন মাত্র ? শুধুই কাব্যের ?

না হে ঘরে ফিরে গেছে যারা জলের বন্ধু ... “হায় তাদের” বলে ছুঁড়ে দেওয়া একটা পুনরাবৃত্তি ... বড্ড সেকেলে ... বড্ড মন খারাপের ... হয়ত ফিরে যাওয়ার ... হয়ত আফসোসের ... হয়ত বা অজানা খামতিরও  ...

২.
নশ্বরে এ ঈশ্বর দর্শন ভাবতে ভাবতেই পাতা পড়ে যায়। দ্যাখা থেকে যে ভাবে দর্শন পৃথক হয়ে যায় এখনও সেভাবেই ... ঠিক সেভাবেই চলে গো কবি... কিছুটা কান্না জড়িয়ে দিও না হয় উপাসনার গায়ে। 
এ ভার্চুয়াল ভীষণ বেসামাল... জোর করে জন্ম দিও না ওয়েবসাইটের মাসল্‌ ... কবি তো নিষ্ঠায় অকুতোভয় ...
কবি নিজেই অক্ষরজাত হয়।

৩.
জলের কাছে ঈশ্বরও তরল হয়ে যায় ... ফলমূলের কাছে নতজানু হয়ে যদি জিজ্ঞেস করো প্রকৃত সত্য – ঈশ্বরের বাগান ? ওরা নিশ্চয়ই বলবে – না হে কবি তুমিই বাগানের ঈশ্বর। বাগানে শুধু জোনাকির জন্য অন্ধকার এনো না প্রজাপতির জন্য আলো এনো।। জল নয় ওরা  আলোতেই তৃষ্ণা মেটায়...  লন্ঠন বাড়িয়ে দাও দ্যাখো ওই মৃত আশ্বকে চিনতে পারো কিনা ... জল নেই জল নেই বলে কবি কি নিজেই ঈশ্বরের রূপকার হয়ে উঠছেন না ... আর ভালো করে দ্যাখো অইই ঘোড়াটির ছবি ...  সেইই লম্বা রেসের ঘোড়া যার পা বেয়ে গড়িয়ে নামে ‘জল দাও জল দাও’ ... প্রতিষ্ঠা নয় ... পুরস্কার নয়...
দুমুঠো ছোলার দাম অনেক বেশী ...
৪.
হুম বেশ উপাদেয়। কবি হেঁটে গেছেন একটা সুস্বাদু গলির মধ্যে দিয়ে আর তার রকমফের বেশ অবাক করে দিল উল্টোদিকের লোকটিকে। ইন্ডাইজেশনের চিন্তায় তার ইন্ডিশিসন আদৌ খাদ্য খাদকের ইকোলজি ব্যালেন্সেই নেইএ কবিকে হজম করা কঠিন বলেই কবির দাওয়াই থিওরি অফ ডাইজেশন। এমন আত্ম সচেতন বলেই ডানলোপিলো থেকে কর্কশ নারকেল দড়ির পাপোশ। এখানেই কবির বাজি ... নিজেকে খাদ্যের নিলামে তুলে আনার সাহস ... সরীসৃপদের আফসোসের মুখে ছড়িয়ে দেওয়া নিজের বিকিরণ ... আর সেই লোকটা যার সাপের মত মাথা  তার কাছে নরম ব্লেডের মত ধারালো চ্যালেঞ্জ –
“ আমাকে গিলে ফেলুন, আমাকে গিলে ফেলুন প্লিজ”
হ্যাটস অফ কবি।
৫.
একটা মেঠো রাস্তার কাছে জাতীয় সড়ক কিভাবে খুলে বলবে তার গরম বিভীষিকা।তার উঠে আসা গলন্ত পিচের কথা। কবি সেই শিতলতাকে মেটোরাস্তার , আলু ক্ষেতের অহংকার বলে দিলেন। ভারী আশ্চর্য সে আলুর ছেলেমেয়েরা কি আজীবন শীতলতার উত্তরাধিকারী ? ওদের উপদ্রব নেই... আশঙ্কার এলার্জি নেই...কবি সফল আর ফসল-এর পার্থক্য এঁকে দিচ্ছেন- সার্থক ভাবে ... ওরা -
 আলু আনতে আনতে
আলু  চাষ করতে করতে
আর পৃথিবীর গোলমাল ও লোকজনের তেমন মূল্য নেই ...
ওদের যেভাবে উষ্ণতার খোঁজ নিভে আসে ত্যামনি জেগে ওঠে শান্ত শীতল একটা দিনের বাসনা। আরো নিপুণতার লক্ষ্যে আনন্দের কাছে কবি আরো একবার ফিরে আসুক শোরগোল থেকে দূরে ...

৬.
এতো এক অন্ধকারের ঈশ্বর প্রাপ্তি। প্রজন্মকে বিষিয়ে দেওয়ার আগে আগুনে পুড়িয়ে শুদ্ধ করার কৌশল। আহা কবি কি সুন্দর স্বয়ং সময়কে রাখলে প্রহরায় –
“আমাদের বারান্দায় গ্রীলের বদলে
লম্বা দন্ডের মতো দাঁড়িয়ে থাকুক পান্ডূর সকাল বিবর্ণ বিকেল”
এমন বিদ্রোহের কোথাও রক্তপাত নেই শুধুই শোধন ... লাভা দিয়ে, নলকূপের আগূন দিয়ে ঘষে ঘষে তুলে ফেলতে হবে চাপ চাপ রাগের অন্ধকার... হা হা হা কবি রাগছেন না কি? কবি ধৈর্য হারাচ্ছেন উগরে দিচ্ছেন ক্ষোভ জানলা চাই না ... দরজা চাই না ...
কেন চাইবেনই বা ? অগুলো নির্দিষ্ট যাতায়াতের উপায় মাত্র ... কবি যেকোনো দিকে যেতে চান কোনো দেওয়াল চাই না ... আকাশ ছাড়া কবির কোনো ছাদ থাকতে পারে না ... নলকূপ থেকে বেড়িয়ে আসুক পৃথিবীর অভ্যন্তরের অন্ধকার আগুন দাও ্লাভা দাও... পুড়িয়ে শুদ্ধ হোক পরবর্তী গৃহস্ত সমূহ ...
৭.
কবির আপেল কথা আসলে তেজস্ক্রীয়তায় আক্রান্ত এক শহর। আরব্য রজনীর কাছে হেরে গেলেন কবি।  গল্পের গভীরে ঘরে ফেরার উপহার আর সেই চিরাচরিত দুর্বলতা শুভ রাত্রি বলে ঘুমিয়ে পড়ার ছলনা।
সম্রাট হলেও কি এভাবে ঘুমোনো যায়? আরো কঠোর পরিশ্রম পরে থাকে পরের সকালে ...
৮.
মহামান্য গোল থেকে এক বৃহত্তর গোলাকার হয়ে ওঠার এক অসম্ভব ম্যাজিক দ্যখালেন কবি। অথচ কোনো তাড়াহুড়ো নেই... খুব ধীরে ধীরে  -“আমি হেঁটে ফিরছিলাম তেত্রিশটা উঁচু নিচু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে” থেকে যাত্রা শুরু করে ক্রমশ –
 “ একবার লাফিয়ে উঠতাম তোমাদের হাতে
বলা যায় না ঠিকঠাক হলে মেরুসভ্যতার ভালুকেরাও বলতো
এই সেই লোক যে পকেট থেকে মুঠো মুঠো ছুঁড়ে দিয়েছে উত্তাপ
এই সেই লোক দুরমুশ হয়ে জাওয়ার আগে পর্যন্ত যে আমাদের
                      নিয়মিত খাওয়াত আখের রস ...”
আহা এতো সভ্যতার জনক নাকি স্বয়ং ঈশ্বর হয়ে উঠছেন কবি তার মুন্সীয়ানায়। শেষ লাইনে যতটা সুখ্যাতি ছড়ালো সে ম্যারাকাস তার চেয়ে খানিক অতৃপ্তি এনে ফেলল এভাবে ম্যাজিক ফুরিয়ে গেলে চলে ? আর একটু কারিগরি ভেবে দেখা যেত ... আহা বড় সাধ রয়ে গেল কবি ... আরো একটু ম্যাজিক পেতাম ...
ঈশ্বর তো আগেই হয়ে গেছেন কবি ... কিন্তু এ এক অদ্ভুত গণিতের মুখোমুখি ... মুখোমুখি ঈশ্বর ও কবি। ঈশ্বর কাঁদেন না অথচ করুণার সিন্ধু বলে পাঁচজনে ... না আমি প্রতিযোগিতায় যাব না ঈশ্বরের সাথে... আমি যাব না কান্নার অধিকারের প্রশ্নে।  আমি সরাসরি ভোট দেব কবিকে ... কবির বাবা মারা গেলে কবি নেমে আসতেই পারেন আসেন মাটির কাছাকাছি। কাঁদতেই পারেন...  তার তো অহমিকা নেই ভালোবাসার কাছে... স্নেহের কাছে... উৎস বীজের কাছে নতজানু হোক কবি ... আর জন্ম হোক আরো গভীরতম কবিতার ভরে উঠুক আমাদের প্রাপ্তি সম্ভার ...
পুনশ্চঃ কবিও আরো একবার ঈশ্বর হয়ে উঠতে পারতেনশূধু আমাদের কাছে নয় ... নিজের পিতৃদেবের কাছেও... পিতৃদেবের স্মরণেই ... তার কান্নার ভ্রম শুধরে নিলে ...

১০.
আসলে ঈশ্বর এক ফোবিয়া। ধরব বললেই ভ্যানিশ। সমস্ত ইন্দ্রিয়কে উহ্য করে দাও... তবে যদি আভিজ্ঞতা কিছু আসে।  কখনও হাত পাতি কখনও হাত উপুর করে নিজেই ঈশ্বর হয়ে যাই। এই ক্রমাগত পদ পরিবর্তন আমাদের ত্রুটি নয়। যে গুমোট থেকে কবির যাত্রা শুরু সেখানের দেওয়া নেওয়া থেকেই ঈশ্বরের গুমটি । প্রতিটি উপলব্ধির গভীরে এক সক্রিয় কণার ছটফট লেগে থাকে। তুমি গান গাও তুমি ছবি আঁকো তুমি অক্ষর সাজাও ঈশ্বর নেমে আসেন আঙুলে আঙুলে ... সমস্ত সীমা না হয়ে যায়... প্রমাণ বলে কিছু নেই... পরম বলে কিছু নেই ... শেষ বলে কিছুনেই ... এ এক যাত্রা ... রূপান্তরের যাত্রা ... শুধু চলার বাহানায় কখনো সে তুমিতে এসে ধরা দেয় ...   আর কখন তুমিই সে হয়ে যাও নিজেই বুঝতেই পারো না ...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন