
কবির নাম, বয়স, লিঙ্গ, ঠিকানা ইত্যাদি যা কিছু কবিতার জন্য জরুরি নয়, তা আমরা মুছে দিয়েছি। আর এভাবেই ১০টি কবিতা পাঠানো হয়েছে অন্য এক কবির কাছে- আলোচনার জন্য। শুধু ১০টি কবিতা, আগে পরে নাথিং। আমাদের সাথে রুমালচুরির এই খেলা খেললেন ১৯ জন কবি।
এখানেও কবির নাম ছাড়া ১০টি কবিতা রাখা হল, সঙ্গে থাকলো আলোচনা। কবির নাম জানার রাস্তা কবিতার নীচ দিয়ে গেছে। তবে আমরা বলবো রুমালচুরির এই খেলায় আপনিও থাকুন। কবির নামটা না হয় একটু পরেই জানলেন।
১০টি কবিতা
চুমু
তুমি মহাজগৎ, ক্ষুধা স্বপ্ন প্রেম
আমরা একমুঠো আলো আর দুমুঠো অন্ধকারের
মানুষ
ধানক্ষেত নিয়ে তোমার চারিপাশ প্রদক্ষিন
করি
অফুরন্ত অপমান নিয়ে তোমার চারিপাশ
প্রদক্ষিন করি
পোড়া হাঁড়ির ভেতর আমাদের কাব্যগ্রন্থ
শুয়ে থাকে
শতাব্দীর পর শতাব্দী
আমাদের চোখের চিঠি ফিরে আসে
আমাদের পাঁজরের চিঠি ফিরে আসে
আমাদের সমস্ত চুমু আমাদের ব্রহ্মকোষেই
ফিরে আসে
কে গ্রহন করবে? কেউ নেই; কেউ নেই
তুমি মহাজগৎ, আমরা হাত পাতলাম
যতোটুকু তুমি দিতে পারো, যতোতুকু আমরা
পেতে পারি
দাও; আজ দাও
অন্ধ
ওগো মহাজগৎ; আমি তোমার অন্ধ প্রেমিক
আমি তোমার শিকড় প্রেমিক
শ্মশান আর করোটির কবিতা লিখে
আজ বড়ো ক্লান্ত
আমি প্যাঁচা; মহজিয়া প্যাঁচা; তোমার
মেঘলা গাছে ঝুলে থাকলাম
আমি কেঁচো; মরমিয়া কেঁচো; তোমার মেঘলা
মাটিতে প্রবেশ করলাম
শ্মশান আর করোটির কপবিতা লিখে
ক্লান্ত; বড়ো ক্লান্ত
আজ দেখলাম, ভাঙা জানলায় তোমার নীল টিকটিকি
ঝুলে আচে
কেন এইভাবে ঝুলে আছে সে? কেন? কেন?
ওগো মহাজগৎ; ওগো মহাজগৎ
তুমি আমাদের এইভাবে ঝুলিয়ে রেখোনা
ঝুলে থাকা বড্ড ক্লান্তির
ঝুলে থাকা, সত্যি সত্যি, বড্ড
ক্লান্তির...
হাড়
তুমি মহাজগৎ; তুমি এত অন্ধকার কেন?
তোমার অন্ধকারে আমাদের স্বপ্ন ও সহজিয়া
চুরি হয়ে যায়
তোমার অন্ধকারে আমাদের শিরা ও সুষুম্না
চুরি হয়ে যায়
ভবচক্রের দোকানে মেয়েদের লাশ পড়ে থাকে
ভিখারির ভাঙা বাটি মেঘে ভরে যায়
সবুজ সাইকেল কোরে মনখারাপ বারবার উঠোনে
আসে
রুগ্ন ইস্কুল মর্চে ধরা হাড় নিয়ে ঘুমিয়ে
পড়ে
গাঁজা ও কল্কের ভেতর কেঁদে ওঠে
ডালিমগাছের বেণী
তুমি মহাজগৎ; তুমি এত অন্ধকার কেন?
তোমার যৌনবাক্সের ভেতর প্রতিদিন লাল জবা
ফোটে
আমরা তোমার এইসব অস্পষ্ট হেঁয়ালি আজও
বুঝলাম না...
শঙ্খ
ওগো মহাজগৎ; ওগো মহাজগৎ
ফনা ও ফাতনা নিয়ে এ জীবন বারবার নষ্ট হয়ে
গেছে
সান্ধ্য বিকেলে নকশীকাঁথা বাউন্ডুলের মতো
উড়ে যায়
হাঁড়িকাঠ ওঁৎ পেতে ছিল
অন্ধকার হাঁ কোরে ছিল
অন্ধ লেখিকা রমন ও শ্রমনের কথা লিখে
আমাদের ব্যর্থ অশ্লীল শতাব্দীর ইতিহাসে
মিশে যায়
ওগো মহাজগৎ; ওগো মহাজগৎ
তুমিই হয়ত সেই অন্ধ লেখিকা
আমাদের মাথার ভেতর মেঘ মধু মৌমাছি
একসঙ্গে থাকে
আমাদ্র মাথার ভেতর শঙ্খ শামুক স্মৃতিকথা
একসঙ্গে থাকে
আমাদের মাথার ভেতর অতৃপ্ত কৃষক এসে
বারবার
কাস্তে চালায়; কোদাল চালায়
আমারা মূর্খ, অতি নির্বোধ
স্নান করার সময় আমাদের মাতৃভাষা হাত থেকে
জলে পড়ে গেছে
দ্বীপ
তুমি মহাজগৎ; চিরকালের মহাজগৎ
এই বস্তুজগতের সিঁড়ি ও শৃঙ্গার
আমরা তোমার নিঃস্ব প্রেমিক; আমরা তোমার
ফতুর প্রেমিক
তোমার জলভর্তি কুয়ো থেকে যুগের পর যুগ
শুধু অতৃপ্ত প্রেম তুলে আনি
পৃথিবীর সমস্ত হ্যারিকেনে বারবার
ময়ূরপালক রেখে আসি
তুমি মহাজগৎ; আমরা তোমার ভাঁড় ও ভিখারি
ছাতিমগাছের নীচে কানকাটা কুকুরের মতো
শুধু ঘেউ ঘেউ করি
ডালিমগাছের চারিপাশে নষ্ট শেয়ালের মতো
শুধু হুক্কাহুয়া করি
তোমায় ডাকলাম; শতবার; সহস্রবার
তুমি বিন্দুমাত্র সাড়া দিলে না
বলো একবার বল, তোমার ক্রৌঞ্চদ্বীপ কোথায়
বলো একবার বল, তোমার দারুচিনিদ্বীপ কোথায়
বলো একবার বল, তোমার ময়নাদ্বীপ কোথায়
আমরা যাবো – আমরা যাবো – দলবেঁধে যাবো
আমাদের শুধু ভেতরে ঢুকবার চাবি দাও
তুমি...
প্যান্ট
ওগো মহাজগৎ; ওগো মহাজগৎ
তুমি ছাড়া আমার ছেঁড়া প্যান্ট সেলাই করবে
কে?
উটের গ্রীবার পাশে এই ব্যর্থ সন্ধ্যা;
হাওয়ামোরগের এই বিরহব্যঞ্জন
আস্তে আস্তে গো-মলে ডুবে যাচ্ছে রাখাল
বালক
পায়ের নুপূর ক্রমশ শিকল হয়ে যায়
জীবন্ত বাবা প্রতিদিন বাড়ি ফেরে মৃত্যু
নিয়ে
আঁতুড়ঘর ভরে যায় লাল লাল ডেঁয়োপিঁপড়েয়
পৃথিবীর পথে পথে শুধু যৌনকর্মীরা
সূর্যাস্ত নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে
বাংলা কবিতা গোপনে হাতকাটা কবিকে চিরকূট
লেখে
ক্লান্ত মা নাইতে এস গোটা রান্না ঘরটাই
জলে ফেলে দেয়
ওগো মহাজগৎ; ওগো মহাজগৎ
আমাদের বিবাহবাসরে আজ আবার বিষধর সাপ
এসেছে...
দেশ
তুমি মহাজগৎ; মেঘে ঢাকা মহুয়ার বনে
অস্পষ্ট হেঁয়ালি তুলেছো
আমার ভাঙা বাংলার প্রেমিক; এইসব হেঁয়ালি
বুঝিনা
শ্মশানের ভেতর কোকিল ডাকছে; আমরা যাবো?
বাঁশগাছের ওপর সন্ধ্যাভাষা এসছে; আমরা
যাবো?
ছেঁড়া প্যান্টের ভেতর যতবার স্বপ্ন রাখি
স্বপ্নগুলো ফুটো দিয়ে নীচে পড়ে যায়
ব্যক্তিগত ডোরাকাটা বাঁশি আজ আর কোথাও
বাজে না
ডাশা পেয়ারায় জোঁক ধরে গেছে
জরায়ুর ভেতর সাপ ঢুকে ছোট্ট ছোট্ট
ভ্রুণেদের ছোবল মারে
তুমি মহাজগৎ; এইসব দেখে কেন চুপ করে আছো?
আমরা জানি, তুমিও জানো, এই দেশ নষ্ট হয়ে
গেছে
লিখবোনা; তবুও কিছুতেই মৃত্যুর কথা
লিখবোনা
শ্মশানের ভেতর কোকিল ডাকছে; ডাকুক; আমরা
যাবোনা...
থুতু
ওগো মহাজগৎ; ওগো মহাজগৎ
আমাদের কোনো দেশ নেই; একটা নতুন দেশ দেবে
আমাদের?
সুজলাং, সুফলাং, যেন কুঁড়েঘরে বাংলাভাষা
জলপানে রত
চারিদিকে কাব্যগ্রন্থ; লাল রঙের ডাকবাক্স
বোবা কিশোরী ও অর্জুনগাছ সারারাত চিঠি
লিখছে
ওগো মহাজগৎ; ওগো মহাজগৎ; এমন একটা দেশ
শতাব্দীর অতীন্দ্রিয় ময়ূর নিরাপদে ঘুরছে
ফিরছে
এমন একটা দেশ, এমন একটা দেশ
দেবে তুমি? দেবে তুমি? মুখ ফুটে বলো
একজন ভাঁড় এসে আমাদের ছেঁড়া প্যান্টে থুতু
দিয়ে যায়
একজন ভিখারি এসে আমাদের ফাটা হাতে
শুধুমাত্র মরা জোনাকি রেখে যায়
আমরা আমাদের লাশ নিয়ে নদীর তলায় চলে
এসেছি
ওগো মহাজগৎ; ওগো মহাজগৎ
তুমিও নৌকা নিয়ে চলে এস; এইখানে জলের
তলায় এইখানে নদীর তলায়
যেন কুঁড়েঘরে বাংলা ভাষা জলপানে রত; ওগো
মহাজগৎ; ওগো মহাজগৎ
ফনা
তুমি মহাজগৎ; অনেক ধাইমা দিয়েছো
তবুও আমিষ মুদ্রাদোষে আমরা চিরকাল
কেয়াফুলে কেউটে হয়েছি
আঁতুড়ঘরের ছাইয়ের ভেতর আজও আমাদের নাড়ি
পড়ে আছে
নীল সাইকেল কোরে আমাদের জীবনে বারবার
বহুরকম প্রেম আসে
আমরা ইচ্ছা মতো ফনা মারি; ইচ্ছামতো দংশন
করি
মুদ্রাদোষ; শুধু মুদ্রাদোষ
মুদ্রাদোষ; শুধু মুদ্রাদোষ
এই জীবন ক্রমশ এক ভারী যৌনবাক্স হয়ে যায়
রামপ্রসাদের মানবজমিন আমরাই ক্রমাগত নষ্ট
করলাম
তুমি মহাজগৎ; আমাদের এইসব নষ্টামি সহ্য
করলে কেন?
কল্কেভর্তি গাঁজার ধোঁয়া ছাড়া আমরা তোমার
হালিশহরকে কিচ্ছু দিইনি
তুমি দিয়েছো; অনেক মা দিয়েছো
অনেক ধাইমা দিয়েছো
আজ এই কালো রাত্রে, আমরা এই যৌনবাক্স,
সজ্ঞানে, পরিত্যাগ করলাম
নাড়িতে যাবো, আমরা নাড়িতে যাবো, কোনদিন
আর ফিরবোনা...
ডানা
ওগো মহাজগৎ; ওগো মহাজগৎ
তুমি আমাদের এই প্রনয় ও প্রতিহিংসার জীবন
দিয়েছো
আমরা এই জীবন নিয়ে বহুবার ঝাউবনে চুমু
রাখলাম
চাঁদ পর্যন্ত ভাঙা ডানা পৌঁছে দিলাম
ধানক্ষেত থেকে ইস্কুল পালান বালিকার
মনখারাপ তুলে আনলাম
সাইকেল কোরে কবিদের বাড়ি বাড়ি ছেঁড়া
খাতার কাব্যগ্রন্থ বয়ে নিয়ে গেলাম
নীল হ্যারিকেন জ্বালিয়ে রক্তজবার লেখা
পড়লাম
ওগো মহাজগৎ; ওগো মহাজগৎ
এইভাবে একটার পর একটা দিন চলে গেছে
জন্মদিন; মৃত্যুদিন
অসম্পুর্ন এবং অসমাপ্ত
রাস্তায় রাস্তায় ঘাম পড়লো, রক্ত পড়লো,
স্মৃতি তৈরি হলো
প্রজাপতির বাএক্স ছিল প্রচুর প্রচুর;
ভেতরে কিন্তু একটাও প্রজাপতি ছিলনা...
মেঘ
তুমি মহাজগৎ; আমাদের ভাঙা পিলসুজ
আমরা তোমার ব্যর্থ শস্যক্ষেত্র; আমরা
তোমার নষ্ট উইপোকা
সাঁকোর নীচে পূর্বপুরুষের ঘুড়ি হাতে
খোঁড়া পায়ে দাঁড়িয়ে থাকি
পঙ্গু ভিখারির বাটির ভেতর আমাদের অশ্লীল
শতাব্দী
পৃথিবীর গলা টিপে ধরে
গাছতলায় বাংলা দিদিমনির চটি ছিঁড়ে যায়
রক্তস্নাত বালিকার হাত থেকে খসে পড়ে
সান্ধ্য কৃষ্ণচূড়া
গোয়ালঘরের ভেতর শুধু অন্ধকার; শুধু
অন্ধকার
মৃত বাবা তবু দাঁড় বায়
দাঁড় বেয়ে দাঁড় বেয়ে জ্যোৎস্নায়
কৃষিক্ষেত খোঁজে
আমাদের মাথার ভেতর একদিন ছোট্ট ছোট্ট মেঘ
ঢুকে পড়ে
আমাদের নাড়ির ভেতর একদিন ছোট্ট ছোট্ট রোদ
ঢুকে পড়ে
বাংলা দিদিমনির চটি সেলাই করতে করতে আমরা
বুঝে যাই
আমাদের ইস্কুল বহুকাল আগেই জলে ডুবে
গেছে...
চাঁদ
ওগো মহাজগৎ; ওগো মহাজগৎ
তুমি কি আমাদের বাড়ি আসবে?
আমাদের বাড়িতে আজ নৌকো কোরে মনখারাপ
এসেছে
মনখারাপের পা নেই কোনো, তবু এসেছে
খরগোসের পিঠে আকাশ নামলো; জোনাকির পিঠে
চাঁদ নামলো
মনখারাপ মনখারাপ শুধু মনখারাপ
পিতামহ, ঘুরে ঘুরে, অন্ধ দুটি চোখ,
আমাদের দিলো
বাবার লাশের ভেতর পিঁপড়ের মতো ধুকে গেল
মা
ওগো মহাজগৎ; ওগো মহাজগৎ
তুমি কি আমাদের বাড়ি আসবে?
আমাদের বকুলতলা নেই
আমাদের কদমতলা নেই
আসবার সময়
একটা আস্ত বকুলতলা নিয়ে এসো
একটা আস্ত কদমতলা নিয়ে এসো...
আলোচনা করলেন সব্যসাচী হাজরা
দাদা
লিকোপার্ক নামুন
লিকোপার্ক!
আরে
দাদা ছাড়ুন ওটাই নিকোপার্ক, নামুন
আরে
বাসটা চালাও না
দাঁড়ান
দাঁড়ান
এই
দাঁড়াবো মানে? পোঁদে অন্য বাস লেগে গেলেতো ছুটবি
ও
মা ডাক্তারটা দেখিয়ে নিও, আমি কবে ফিরবো জানিনি, ৫০০টাকা আচেতো?
এই
ক্যালানেচোদা বাসটা টান না
খিস্তি
দেবেন না বলে দিলুম
...
এরই মাঝে মহাজগৎ মহাজগৎ মহাজগৎ মহাজগৎ মহাজগৎ
মহাজগৎ
মহাজগৎ মাঝে এরই
টান
মারলো, গড়ালো, আছাড় খেলো, ব্রেক মারলো, কেস খেলো
নামুন
কলেজ মোড়
আবার
গৎ মহা মহা এক বিস্তৃত হাঁ এক
নিষ্কৃত না
মুখ
খুললাম অ্যাতোবার। মানুষ টের পেলো না।
কি
এই মহাজগৎ? কেন এই মহাজগৎ? কবিতায় সে কি
শুধুই বিস্তৃতির কারণে? না কি তার একান্ত প্রয়োজনে?
আজও
রহস্যময়।শূন্য থেকে
মহাজগৎ,
কোয়ান্টাম শূন্যতা, ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশন,
হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা ভাবনা, বিগ-ব্যাং, হিগস্ ক্ষেত্র, ডার্ক এনার্জি,
ম্যাটার-অ্যান্টম্যাটা্র কতকিছু জুড়ে যায়।
এই
বিপুল বিস্ময়ের সামনে স্রষ্টা দাঁড়ালেন কেন? নিজেকে খুঁজতে?
অস্তিত্বের আলো/কালোকে টের পেতে?
না
কি ঈশ্বর=মহাজগৎ
না
কি ঈশ্বর/মহাজগৎ
না
কোনো বিশ্লেষণ নয় শুধু জিজ্ঞাসা থেকেই। খোঁজ
থেকেই।
একটা
লেখার থেকে আমরা কি চাই?
সেই
দীর্ঘ সময় ধ’রে এই কথা চলে আসছে লেখা কখনো আত্মগত , কখনো বস্তুগত। কখনো
এই দোলনের মধ্যেও সমন্বয় বা কখনো তাকে ছাড়িয়ে যাওয়া।আমরা এইসব বহু-ব্যবহৃত তত্ত্বগত আলোচনায় না গিয়ে
আসুন একটু ইনফর্মাল হই।
শ্রী
অরবিন্দের ‘ভবিষ্যতের কবিতা’ বইতে
‘কাব্যের আত্মা’ ব’লে একটি
প্রবন্ধে পড়েছিলাম- “কাব্যের কাছ থেকে কোন্ মহত্তম শক্তি আমরা দাবি করি? যে
মানবমন উপরে উঠে, অন্তরে প্রবেশ এবং বাইরে বেরিয়ে তার ব্যাপকতম
বিস্তার, গভীরতম গভীরতা এবং উচ্চতম শীর্ষে উপনীত হচ্ছে,
সেই মানবমন এই স্বয়ংপ্রকাশ বীণাযন্ত্রটি থেকে কোন্ সর্বোত্তম সঙ্গীতের
সুর ধ্বনিত করে তুলতে পারে?”
এই
অংশবিশেষ এই ভাবে না হলেও কখনো কখনো পাঠকের মনে জাগে।
আবার
অন্যভাবে বলা যায় ভাবনা ও প্রয়োগ-আঙ্গিকের মিশেলে সৃষ্ট ,বা রসায়নজাত এই প্রোডাক্টটিক পাঠকের মস্তিষ্কে কি প্রভাব ফ্যালে?
বিমান
দুর্ঘটনা
মৃত্যু
শ্মশান
পার্লার
চুল
কালো
অন্ধকার
আলেয়া
আলো
আলোড়িত
হচ্ছে জন্মের ছায়াছবি
কবি দেখলেন। দ্যাখালেন। প্রশ্ন করলেন। জ্বালাতে চাইলেন সত্যের আলোটুকু। ভাবনা ও পথের ভালোটুকু এবং তা “মহাকালো মাঝে”।
কবি দেখলেন। দ্যাখালেন। প্রশ্ন করলেন। জ্বালাতে চাইলেন সত্যের আলোটুকু। ভাবনা ও পথের ভালোটুকু এবং তা “মহাকালো মাঝে”।
দৃষ্টি
খুলে দাও ।আমরা যেটাকে অন্তর্দৃষ্টি বলি। কিন্তু তার সাথে বাইরের এক অনবরত
যোগাযোগের প্রয়োজন। প্রয়োজন বাইরে ও ভেতরের যুগপৎ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। প্রয়োজন
সংশ্লেষ ও বিশ্লেষ। টের পাই এই জগত ও জীবনের পারস্পরিক আদান-প্রদানের জন্য ভেতরকে
সজাগ করা। আর তাই এই লেখাগুলো পড়তে পড়তে মনে হয়েছে আমার। জীবন ও জগত বিচ্ছিন্ন নয়
, একে অপরের জন্য।
এই
প্রকৃতি , মানুষ ও জীবন সম্পর্কে সেই দর্শনের মুখোমুখি নিয়ে আসেন কবি। যেন এক সত্য
মুক্তি পায় প্রতিদিনের অন্ধকার থেকে, তার ক্ষত থেকে।
“শ্মশান আর করোটির কবিতা লিখে/আজ বড়ো ক্লান্ত”
শ্মশান?
করোটি?
জ্বলন্ত
চিতা,আধপোড়া-কাঠ, মৃত ব্যক্তির জামা, কাপড়, ধূপ, কান্না, হরিবোল-ধ্বনি, কোথাও
ইলেকট্রিক চুল্লি...
লম্বা
উদর তার , পরনে বাঘের চামড়া , নীল গায়ের রঙ, জটা থেকে প্রলম্বিত চুল, রক্তচোখ, বাঁ
হাতে করোটি , ডান হাতে খড়গ, ওই তো সে হাসছে চিতার উপর দাঁড়িয়ে। সে হাসির শব্দ মানব
সভ্যতাকে কটাক্ষ করছে। এই শব্দ থামে না।
কবিও
কি তাই ক্লান্ত?
করোটির
পর করোটি সাজানো এই সভ্যতার অংশ হয়ে আর কতোদিন সে বিষ ধারণ ক’রে ঝুলে থাকতে চায়?
সরাসরি
মহাজগত বা এই রূপক-এ তার এই অস্তিত্ব বারবার সেই প্রশ্নকেই যেন প্রতিধ্বনিত করছে।
‘কবি’
এই শব্দটি ‘Poet’-এর প্রতিশব্দ। জানা যায় ‘পদ্য’ এমনকি ‘গদ্য
রচয়িতা’-র ক্ষেত্রেও সংস্কৃতে এই শব্দটির ব্যবহার রয়েছে। তবে বৈদিক ভাবনায় ‘কবি’
বলতে ‘ঋষি-কবি’ এই কথাটা পাওয়া যায়। সত্যকে উপলব্ধি এবং সেই উপলব্ধি-জাত সূক্ষ-দর্শনের
প্রকাশ। এই লেখাগুলো পড়লে সেই ‘ঋষি-কবি’ কথাটাই যেন উঠে আসে। দয়া করে ঋষি বললেই
আমাদের মনে তার যে চেহারাগত ধারণা ভেসে ওঠে সেই দিকে যাবেন না। আমি শুধুমাত্র
‘লেখা’ নিয়েই এই কথা লিখলাম।
“There
is an old quarrel between philosophy and poetry”... Plato এই কথা অন্য অ্যাঙ্গেল
থেকে হলেও অবশ্যই বিষয়গত-দর্শন ও কবিতা এক হবে না। এ আমার ব্যক্তিগত
বিশ্বাস।‘দর্শনের কবিতা’ নয় কিন্তু ‘কবিতার দর্শন’ বা ‘সৃষ্টিশীল লেখার দর্শন’ যা
জীবনবোধ থেকে উঠে আসা। তার? সে থাকবেই। সত্যের বিভিন্ন দিক সেই বহন করবে।
শ্রী
অরবিন্দের কথায় “দার্শনিকের কাজ হল মিথ্যা থেকে সত্যকে পৃথক করা এবং সত্যের
বিভিন্ন অংশ ও বিভিন্ন দিককে পরস্পরের সঙ্গে একটি বুদ্ধিসিদ্ধ সম্পর্কের মধ্যে
বিন্যস্ত করা। আর কবির কাজ সত্যের বিভিন্ন দিককে ধারণ করা এবং তাদের একটি জীবন্ত
সম্পর্কের মধ্যে মূর্ত করে তোলা।”
“মনখারাপ মনখারাপ শুধু মনখারাপ/পিতামহ, ঘুরে ঘুরে, অন্ধ দুটি চোখ, আমাদের দিলো/বাবার লাশের ভেতর পিঁপড়ের মতো ধুকে গেল মা”
“একজন ভাঁড় এসে আমাদের ছেঁড়া প্যান্টে থুতু দিয়ে যায়/একজন ভিখারি এসে আমাদের ফাটা হাতে শুধুমাত্র মরা জোনাকি
রেখে যায়/আমরা
আমাদের লাশ নিয়ে নদীর তলায় চলে এসেছি”
“ব্যক্তিগত ডোরাকাটা বাঁশি আজ আর কোথাও বাজে না /ডাশা পেয়ারায় জোঁক ধরে গেছে /জরায়ুর ভেতর সাপ ঢুকে ছোট্ট ছোট্ট ভ্রুণেদের ছোবল মারে”
এভাবেই
এক এক ক’রে
তুমি মহাজগৎ; তুমি এত অন্ধকার কেন?
এক গভীর জীবনবোধ , এবং তা থেকে নিঃসৃত যে সত্য সেখানে
আবেগ ভর করতে বাধ্য। সভ্যতার ঘুণ সহজকে সহজ থাকতে দিলো না। হিংসা, খুন, জখম,
আক্রমণ, কুৎসা, অপপ্রচার, ধর্ষণ, ধর্মীয় অন্ধত্ব, শক্তির দম্ভ, দলাদলি, লোভ এই এত
এত... যেন ‘মহাজগৎ’ নামক বিশাল বিস্তৃতির কাছে কবির প্রশ্ন। কবির স্বীকারোক্তি।
যেন অদ্ভুত সেই আঁধারের কাছে অস্তিত্বের অন্ধকার নিয়ে কবির যাবতীয় জিজ্ঞাসা ,
আত্মকথন। যেন এক দ্রষ্টা উপলব্ধি করলেন অস্তিত্বের সেই চরম সত্যকে আর প্রকাশ করতে
চাইলেন তাঁর কলমে।
মার খানকির ছেলেকে, সালা পকেটমার
আরে দেখছেন কি দাঁড়িয়ে!
মালটাকে বাঁচিয়ে রেখে লাভ কি মেরে ফ্যাল
সাইড দিন একটু। উফ্
তোরা কি মস্করা করছিস!
উফ্ কি দেখতে রে ভাই!!!
মার না
দিদি ও দিদি এবার এগোন
এরই মাঝে মহাজগৎ মহাজগৎ মহাজগৎ মহাজগৎ মহাজগৎ
মহাজগৎ
মহাজগৎ মাঝে এরই
বৌদ্ধমতে
জীবন দুঃখময়। তাঁর সেই চার আর্যসত্য-
(১) জগত দুঃখময়
(২) দুঃখ সমুদয় বা দুঃখের হেতু আছে
(৩) দুঃখের নিরোধ বা নির্বাণ সম্ভব
(৪) দুঃনিরোধের উপায় বা মার্গ আছে
(২) দুঃখ সমুদয় বা দুঃখের হেতু আছে
(৩) দুঃখের নিরোধ বা নির্বাণ সম্ভব
(৪) দুঃনিরোধের উপায় বা মার্গ আছে
দুঃখের কারণ আছে আর সেখানেই দ্বাদশ নিদান বা ভবচক্র আর শৃঙ্খলিত সেই
নিদানে সবকিছুর সাথে জাতি ও জরামরণ মিলে সম্পূর্ণ চক্র।
মার্গ আছে। কিন্তু সে পথে হাঁটে কে?
অতীত
আজ ও আগামী এই অনন্ত সময়ে এক ব্যক্তি আমি খুঁড়ে চলেছে বিশ্ব ‘আমি’কে। জীবনের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি যেন বাস্তবিক সংঘাত ও সম্পর্কের
সাথে মিলিয়ে দেখে নিতে চায় মহাবিশ্বের লাবডাব। সেই মহাবিশ্ব যার উপাদান মূলত অন্ধকার শক্তি। যার আরেক নাম কৃষ্ণ।প্রতি চার ভাগের তিন ভাগ যার উপস্থিতি। সে এক বিস্ময়। সে শুধুই বিস্ময়। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেই মানুষ। সেই শক্তির সামনে নগ্ন বাস্তবের মধ্যে
হেঁটে চলা সেই মানুষ যে লিখতে পারে “তুমি মহাজগৎ; তুমি এত অন্ধকার কেন?”
কখনো
লেখায় উঠে আসছে “ভবচক্রের দোকানে মেয়েদের লাশ পড়ে থাকে” আবার কখনো পাই “তোমার
যৌনবাক্সের ভেতর প্রতিদিন লাল জবা ফোটে”(হাড়)
আমরা
অনেকেই জানি ষটচক্রের সেই ‘মূলাধার চক্র’-এর কথা। চার দল। লাল রঙ। মৌলিক ইচ্ছা ও
আকাঙ্ক্ষার উৎস। কামশক্তির আধার। ইড়া, সুষুম্না, পিঙ্গলা। কুলকুণ্ডলিনী।
মনে পড়ে সেই লালনগীতি "মূলাধার কুঠুরি নয়টা/তার ওপরে চিলেকোঠা..."
মনে পড়ে সেই লালনগীতি "মূলাধার কুঠুরি নয়টা/তার ওপরে চিলেকোঠা..."
লেখক
যে যাপনের অংশ তাঁর নিত্য যে রক্তক্ষরণ সভ্যতার যে রক্তস্নান তারই মাঝে সেই মানবিক
সারল্যের জন্য যেন এক অসম্ভব আকুতি। প্রাণের তাগিদ থেকেই তিনি যেন মহাজগৎকে ব’লে ফ্যালেন
“আমাদের বকুলতলা নেই/আমাদের কদমতলা নেই/আসবার সময়/একটা আস্ত
বকুলতলা নিয়ে এসো/একটা আস্ত
কদমতলা নিয়ে এসো...”
না
এই লেখা পড়তে পড়তে মনে হয়েছে এ শুধুই কল্পনা নয়। এখানে আশ্চর্য বা উদ্ভট কোনো রূপকল্প
নেই। বা শুধুই মনে হয়নি
পরাবাস্তবাদীদের সেই কথা “প্রকৃত সত্য কেবল অবচেতনেই বিরাজ করে”। বরং মনে হয়েছে এক
সজাগ দৃষ্টি উন্মোচিত হয়েছে দ্রষ্টার চোখে। ‘আমি’-র ঘরে ও বাইরে যেন জীবনকে
ছিন্নভিন্ন ক’রে দেখেছেন কবি। একটা জাগতিক সময় পার করার পর তিনি যেন ‘মহাজগৎ’-কে
সামনে রেখে আত্মখননে রত। সেখানে তাঁর ‘শৈশব থেকে আজ’ নিংড়ে নিয়ে আসছে এক চেতনালব্ধ
বোধ যা পাঠককে ভরিয়ে তুলছে সূক্ষ জীবনদর্শনে।
অন্ধু
চোখ,
বাবার লাশ, ব্যর্থ শস্যক্ষেত্র, নষ্ট উইপোকা, পঙ্গু ভিখারী, অশ্লীল
শতাব্দী, রক্তস্নাত বালিকা, অন্ধকার গোয়ালঘার,
বাংলা দিদিমণির ছিঁড়ে যাওয়া চটি, মৃত বাবা,
জলে ডুবে যাওয়া স্কুল, ফণা , দংশন, ভারী যৌনবাক্স, কালো রাত,
মরা জোনাকি, ফাটা হাত, জোঁক
ধরা পেয়ারা, জরায়ুর ভ্রূণে সাপের ছোবল, সূর্যাস্ত নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যৌনকর্মী, শিকলে পরিণত নূপুর,
লাল ডেঁয়োপিঁপড়েয় ভরে যাওয়া আঁতুড়ঘর, কানকাটা কুকুর,
নষ্ট শেয়াল, অতৃপ্ত কৃষক… আরও কতো কতো আর এরই মাঝে কবির প্রশ্ন সেই ‘মহাজগত’-এর কাছে
“বলো একবার
বল, তোমার ক্রৌঞ্চদ্বীপ কোথায়
বলো একবার
বল, তোমার দারুচিনিদ্বীপ কোথায়
বলো একবার
বল, তোমার ময়নাদ্বীপ কোথায়
আমরা যাবো
– আমরা যাবো – দলবেঁধে যাবো
আমাদের
শুধু ভেতরে ঢুকবার চাবি দাও তুমি...”
এর কোনো আর ব্যাখ্যা হয় না। সে কাজ আমার নয়। আমার কবিতা
ভাবনা প্রকাশের জায়গাও এটা নয়। শুধু যা পেলাম, যার সামনে দাঁড়ালাম…
এই নিচে এসো
চরিত্রহীন লম্পট
মোবাইল নম্বর: XXXXXXXXX
ব্যর্থ প্রেমিক যোগাযোগ করুন
“সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে”
“আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম”
“থাকিলে ডোবাখানা হবে কচুরিপানা”
স্যার এদিকে এসে বসুন
এই ফুলকপি কত?
চেতলা যাবে?
না তারাতলা
আলোচনা পড়ে কবি জহর সেন মজুমদার সব্যসাচীকে এস-এম-এস করলেন-
উত্তরমুছুন"অনবদ্য। পড়তে পড়তে বিস্মিত। এইরকম গদ্য নতুন চেতনার দরজা খুলে দিলো। আমি নতমস্তক ও কৃতজ্ঞ..."
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুন